ঢাকা, বুধবার, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ৩০ জুলাই ২০২৫, ০৪ সফর ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

কোনো অঞ্চলে কখন দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:১৯, জুলাই ২৯, ২০২৫
কোনো অঞ্চলে কখন দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়? ত্রাণ বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ক্ষুধার্তরা

জাতিসংঘ-সমর্থিত একটি পর্যবেক্ষক সংস্থা আজ (মঙ্গলবার) সকালে সতর্কবার্তা জারি করে জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় বর্তমানে দুর্ভিক্ষের সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি বাস্তব হয়ে উঠছে।

ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেইজ ক্লাসিফিকেশনের (আইপিসি) ওই সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকার বেশিরভাগ অঞ্চলে খাদ্য মানদণ্ডে এবং গাজা সিটিতে তীব্র অপুষ্টির মানদণ্ডে এরইমধ্যে দুর্ভিক্ষের মাত্রা অতিক্রম করেছে।

জাতিসংঘ, ত্রাণ সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের সরকারের সমন্বয়ে গঠিত বৈশ্বিক উদ্যোগ আইপিসি নিজে থেকে কোনো অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ চলছে কি না, তা ঘোষণা করে না।

তবে তারা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এমন এক পরিস্থিতি তুলে ধরে, যার ওপর ভিত্তি করে সরকার, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করতে পারে।

দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করার জন্য কী কী শর্ত পূরণ করতে হয়? আইপিসি-র নির্ধারিত তিনটি শর্ত রয়েছে— প্রথমত, অন্তত ২০ শতাংশ পরিবারের খাবারের তীব্র সংকট থাকে এবং তারা অনাহার বা চরম দারিদ্র্যের মুখে পড়ে।

দ্বিতীয়ত পাঁচ বছরের নিচের বয়সী ৩০ শতাংশের বেশি শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভোগে, তৃতীয়ত প্রতিদিন প্রতি ১০ হাজার মানুষের মধ্যে দুজন প্রাপ্তবয়স্ক বা চারজন শিশুর মৃত্যু ঘটে ক্ষুধা বা অপুষ্টির কারণে।

ইসরায়েল গাজায় আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর কার্যক্রম পরিচালনায় বাধা দিচ্ছে। ‘মেডসঁ সঁ ফ্রঁতিয়েরে’র (এমএসএফ) গাজা বিষয়ক জরুরি ত্রাণ কার্যক্রমের দায়িত্বে থাকা আমান্ডে বাজেরোল সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেন, অব্যাহত যুদ্ধ এবং সাহায্য অবরোধের কারণে বর্তমানে আমরা কোনো জরিপ চালাতে পারছি না, যা দুর্ভিক্ষ ঘোষণার আনুষ্ঠানিক ভিত্তি দিতে পারে।

এএফপিকে দেওয়া এক বক্তব্যে ‘অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গারে’র মধ্যপ্রাচ্য কার্যক্রম পরিচালক জ্যঁ-রাফায়েল পুতু বলেন, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর নির্দেশে গাজার জনগণকে বারবার স্থানান্তর এবং সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় দুর্ভিক্ষের অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, এটা পুরোপুরি মিথ্যা। গাজায় কোনো অনাহারের নীতি নেই, এবং সেখানে কোনো দুর্ভিক্ষ চলছে না।

গাজা উপত্যকায় বর্তমানে দুর্ভিক্ষের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ সমর্থিত সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেইজ ক্লাসিফিকেশন বা আইপিসি।

তাদের এক পর্যালোচনায় সতর্ক করে বলা হয়েছে, অসংখ্য প্রমাণে দেখা যাচ্ছে যে ব্যাপক অনাহার, অপুষ্টি ও বিভিন্ন রোগ থেকে ক্ষুধাজনিত মৃত্যুর হার বাড়ছে। সর্বশেষ তথ্য ইঙ্গিত দেয় যে গাজা উপত্যকার বেশিরভাগ অংশ দুর্ভিক্ষের সীমায় পৌঁছেছে এবং গাজা সিটিতে মারাত্মক অপুষ্টি দেখা দিয়েছে।

এদিকে স্কটল্যান্ডে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে এক বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, গাজায় সত্যিকার অর্থেই দুর্ভিক্ষ চলছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোববার জানিয়েছে, ২০২৫ সালে গাজায় অপুষ্টির কারণে ৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে যার মধ্যে ৬৩ জনই মারা গেছেন এই মাসে। এদের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু ২৪ জন।

২০২৩ সালে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে এ পর্যন্ত নিহত ৬০ হাজার ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।  

আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।