ঢাকা, শনিবার, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২, ১২ জুলাই ২০২৫, ১৬ মহররম ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি ও যুদ্ধবিরতি আলোচনার মধ্যেই গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৮২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:০৪, জুলাই ১১, ২০২৫
জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি ও যুদ্ধবিরতি আলোচনার মধ্যেই গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৮২ ইসরায়েলি স্থল অভিযান চলাকালে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে দক্ষিণ গাজার খান ইউনুস থেকে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা আল-মাওয়াসি এলাকার দিকে যাচ্ছে।

গাজায় সহায়তা সরবরাহে বাধা ও সহিংসতার মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসরায়েলের সঙ্গে একটি নতুন চুক্তি করেছে, যার ফলে খাদ্য ও জ্বালানি প্রবেশের পথ কিছুটা উন্মুক্ত হতে পারে।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গাজাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৮২ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

এই হামলাগুলো এমন সময় ঘটল যখন যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চলছে এবং ফিলিস্তিনিদের রাফায় জোরপূর্বক স্থানান্তরের পরিকল্পনা ঘিরে তীব্র সমালোচনা চলছে। খবর আল জাজিরা।

নিহত ১৫ জন গাজার দেইর আল-বালাহ অঞ্চলে শিশুদের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য সংগ্রহের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকাকালে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন। এর মধ্যে ৯ শিশু ও ৪ নারী ছিলেন। এ হামলায় আরও অন্তত ৩০ জন আহত হন, যাদের মধ্যে ১৯ জন শিশু।

জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল এ হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, সহায়তা নিতে আসা পরিবারের ওপর এমন হামলা অমানবিক।

তিনি আরও বলেন, আজ গাজার বহু মানুষের বাস্তবতা এটাই— দীর্ঘদিন ধরে পর্যাপ্ত সহায়তা না আসায় এবং যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী পক্ষগুলো বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্ব পালন না করায় শিশুরা অনাহারে ভুগছে, দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি বাড়ছে।

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন পূর্ণাঙ্গভাবে মেনে চলার আহ্বান জানান এবং এ ঘটনায় তদন্তের দাবি করেন।

অন্যদিকে হামাস এ হামলাকে গাজায় ইসরায়েলি ‘গণহত্যা অভিযানের’ অংশ হিসেবে অভিহিত করেছে। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, “ইসরায়েল এখনো স্কুল, রাস্তাঘাট, আশ্রয় শিবির ও বেসামরিক ভবনে সাধারণ মানুষের ওপর বর্বর গণহত্যা চালাচ্ছে, যা মূলত জাতিগত নিধনের একটি পূর্ণমাত্রার অপরাধ। আর এই সবকিছু ঘটছে বিশ্ববাসীর চোখের সামনে। ”

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলে চালানো হামলায় ১,১৩৯ জন নিহত হওয়ার পর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলের যুদ্ধ অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৭ হাজার ৭৬২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৬৫৬ জন।

জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি
রোববার থেকে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাস একটি যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা করছে, যার আওতায় হামাস ৬০ দিনের বিরতিতে ১০ জন জিম্মিকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার হামাস জানায়, সহায়তা প্রবাহ এবং ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার ইস্যুতে এখনো মতপার্থক্য রয়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্র সফরে থাকা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েল ৬০ দিনের বিরতির আওতায় অর্ধেক জিম্মি মুক্তির চুক্তি করতে আগ্রহী। এরপর যুদ্ধ স্থায়ীভাবে বন্ধের আলোচনা শুরু হতে পারে, তবে তার জন্য হামাসকে অবশ্যই নিরস্ত্রীকরণ ও শাসনক্ষমতা ছাড়তে হবে।

নেতানিয়াহু বলেন, “যদি আলোচনার মাধ্যমে তা সম্ভব হয়, ভালো। আর যদি না হয়, তবে বলপ্রয়োগে আমরা সেই লক্ষ্য অর্জন করব। ”

এর আগে সপ্তাহের শুরুতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ দক্ষিণ গাজার রাফায় ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ’র জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তামারা আলরিফাই আল জাজিরাকে জানান, “এই পরিকল্পনা প্রকৃতপক্ষে মিশর সীমান্তে একটি বিশাল ‘ঘনীভূত শিবির’ গঠনের সমান। ”

তিনি বলেন, “এতো বড় পরিসরে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি ঘটানোর প্রক্রিয়ায় আমরা নিশ্চুপ থাকতে পারি না, এমনকি পরোক্ষভাবে সায় দিতেও পারি না। ”

গাজায় সহায়তা নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চুক্তি
যুদ্ধের ময়দানের বাইরেও ইউরোপীয় কর্মকর্তারা ইসরায়েলের সঙ্গে নতুন একটি চুক্তি করেছেন, যার মাধ্যমে গাজায় জরুরি খাদ্য ও জ্বালানি পাঠানো সম্ভব হতে পারে, এমনটাই জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কায়া কাল্লাস।

তিনি বলেন, “এই চুক্তির মাধ্যমে আরও বেশি পারাপার পথ খুলবে, গাজায় সহায়তা ও খাদ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করবে, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর মেরামত হবে এবং সাহায্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। ”

তবে সাহায্য সংস্থাগুলো জানিয়েছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিধিনিষেধ ও সহিংসতার কারণে গাজায় সহায়তা পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে, এমনকি মে মাসে অবরোধ কিছুটা শিথিল করার পরও।

কাল্লাস আরও জানান, এই চুক্তি জর্ডান ও মিসর থেকে সহায়তা করিডোর পুনরায় চালু করতে এবং গাজাজুড়ে স্থানীয় বেকারি ও রন্ধনকেন্দ্র পুনরায় চালু করতে সহায়তা করবে।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সার ভিয়েনায় এক সম্মেলনে অংশগ্রহণকালে এই চুক্তিকে স্বীকার করে বলেন, “ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আমাদের সংলাপের পর এই চুক্তি হয়েছে। ”

তিনি জানান, চুক্তির আওতায় আরও বেশি ট্রাক, আরও বেশি পারাপার পথ এবং মানবিক সহায়তার জন্য আরও রুট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

তবে, এই সহায়তা জাতিসংঘ-পরিচালিত ব্যবস্থার মাধ্যমে যাবে, নাকি বিতর্কিত মার্কিন ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাইন্ডেশন-জিএইচএফ ব্যবস্থার মাধ্যমে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। জিএইচএফ ব্যবস্থাকে ঘিরে সহিংসতা ও বিতর্ক রয়েছে বলে অনেক সংস্থা জানিয়েছে।

এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।