যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে এক হৃদয়বিদারক বাস্তবতায় জীবন ও মৃত্যুর মধ্যবর্তী এক জটিল লড়াইয়ে আটকে আছেন নার্স অ্যাড্রিয়ানা স্মিথ। বয়স মাত্র ৩০।
চিকিৎসকেরা অ্যাড্রিয়ানাকে লাইফ সাপোর্টে রেখেছেন কেবল তার গর্ভস্থ সন্তানটিকে বাঁচিয়ে রাখার আশায়। এই ব্যতিক্রমী ও মানবিক চেষ্টার পেছনে রয়েছে জর্জিয়ার বিতর্কিত ‘হার্টবিট আইন’। এই আইন অনুসারে, গর্ভে ভ্রূণের হৃদস্পন্দন পাওয়া গেলে। এমনকি গর্ভধারিণী নারী ব্রেন-ডেড হলেও গর্ভপাত নিষিদ্ধ।
ঘটনাটি শুরু হয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে। তখন অ্যাড্রিয়ানা ছিলেন প্রায় নয় সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা। হঠাৎ তীব্র মাথাব্যথা অনুভব করেন। চিকিৎসার জন্য যান আটলান্টার নর্থসাইড হাসপাতালে। চিকিৎসা শেষে বাড়ি পাঠানো হয় তাকে। পরদিন সকালে তার প্রেমিক ঘুম থেকে উঠে দেখতে পান, অ্যাড্রিয়ানা অজ্ঞান হয়ে পড়েছেন, শ্বাস-প্রশ্বাসে গড়গড় শব্দ হচ্ছে। দ্রুত ৯১১ নম্বরে ফোন করা হয়। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় এমোরি ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে। সেখানেই জানা যায়— তার মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। চিকিৎসকেরা তাকে ব্রেন-ডেড ঘোষণা করেন।
বর্তমানে অ্যাড্রিয়ানার গর্ভস্থ সন্তানের বয়স ২১ সপ্তাহ। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, যদি এখন লাইফ সাপোর্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে শিশুটিও মারা যাবে। তাই আপ্রাণ চেষ্টা চলছে অন্তত ৩২ সপ্তাহ পর্যন্ত তাকে গর্ভে রাখার, যাতে শিশুটি কিছুটা পরিণত হয়ে জন্ম নিতে পারে।
এই সময়ে অ্যাড্রিয়ানার ছোট ছেলেটি প্রতিদিন হাসপাতালে আসে, মায়ের বিছানার পাশে বসে। এখনও সে বিশ্বাস করে— মা শুধু ঘুমিয়ে আছেন। পরিবার জানে, অ্যাড্রিয়ানা আর ফিরে আসবেন না। তবে আশার আলো টিমটিম করে জ্বলছে তার গর্ভস্থ সন্তানের মধ্যে।
জর্জিয়ার ‘হার্টবিট আইন’ ও বিতর্ক
২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট ‘রো বনাম ওয়েড’ মামলার ঐতিহাসিক রায় বাতিল করে দেয়। এরপর থেকেই জর্জিয়ায় গর্ভাবস্থার ছয় সপ্তাহেই ভ্রূণের হৃদস্পন্দন ধরা পড়লে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করা হয়। যদিও আইনে বলা হয়েছে, মায়ের প্রাণহানির আশঙ্কা থাকলে গর্ভপাত অনুমোদনযোগ্য, তবে বাস্তবে তার প্রয়োগ নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক।
ঠিক এমনই আইনের কারণে ২০২৪ সালে টেক্সাসেও একটি মামলা চরম আলোচনার জন্ম দেয়। যেখানে আইনের সীমাবদ্ধ ব্যাখা জীবন-মৃত্যুর ব্যবধানে ফারাক সৃষ্টি করে।
এমজে