ঢাকা, বুধবার, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

তথ্যপ্রযুক্তি

৯০ দিনের মধ্যে চালু হতে যাচ্ছে পাহাড়ের ১০০ স্কুলে স্টারলিংক সেবা

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:৪৩, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৫
৯০ দিনের মধ্যে চালু হতে যাচ্ছে পাহাড়ের ১০০ স্কুলে স্টারলিংক সেবা ক্লাসে ছাত্রীরা

একটা সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষাখাত সমতলের চেয়ে অনেক পিছিয়ে ছিল। বর্তমান সরকার সমতলের মতো পাহাড়ের শিক্ষাখাতকে এগিয়ে নিতে নানামুখী উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েছে।

এরমধ্যে অন্যতম হলো, প্রযুক্তি ব্যবহারের সমন্বয় ঘটিয়ে পাহাড়ে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা।  

পাহাড় যেহেতু দুর্গম এলাকা। এখানে সহজে নেটওয়ার্ক সেবা পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। নেই উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা, সেই কারণে বিদ্যুৎ সেবাও পৌঁছানো যাচ্ছে না।

এসব উপলব্দি থেকে সরকার এইবার দুর্গম পাহাড়ের বিদ্যালয়গুলোতে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলতে নেটওয়ার্ক সেবা পাহাড়ের দুর্গম বিদ্যালয়গুলোতে পৌঁছে দিতে আধুনিক স্টারলিংক নেটওয়ার্কের সহায়তা নিচ্ছে। এ নেটওয়ার্ক অতি দ্রুত দুর্গম এলাকাগুলোতে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার আগামী ৯০ দিনের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান) একশ’টি বিদ্যালয়ে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সংযোগ চালু করতে যাচ্ছে।  

শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনুপাত হিসাবে করে কোনো জেলায় কয়টি স্কুলে এ সেবা দেওয়া হবে সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো, ‘দুর্গম পাহাড়ি এলাকার শিক্ষার্থীদের ই-লার্নিং ও আধুনিক শিক্ষার সুযোগ দেওয়া, যা আগামী ৯০ দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার মানে সমতা আনা এবং শিক্ষার্থীদের শহরে থাকা অভিজ্ঞ শিক্ষকদের ক্লাসে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া হবে’।

এ উদ্যোগ নেওয়ার মূল কারণ হলো, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল বর্তমানে আলোর যুগে অন্ধকারে রয়েছে, কারণ এখানকার অনেক মানুষ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইন্টারনেট সুবিধার বাইরে। এই প্রকল্প চালু হলে তা শিক্ষাক্ষেত্রে এক প্রযুক্তিগত বিপ্লব আনবে বলে মনে করা হচ্ছে’।

রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার ধুপশীল সরকারি প্রথমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সৈকদ দাশ রুবেল বলেন, বর্তমান যুগ তথ্য ও প্রযুক্তির যুগ। প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা বিশ্বের সাথে সংযুক্ত হতে পারি ও নানা অজানা বিষয় সম্পর্কে ধারণা জানতে পারি। বর্তমান যুগে তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার না জানলে পিছিয়ে থাকতে হয়। পাহাড়ে তথ্য প্রযুক্তির সুযোগ না থাকার আমরা এখনো পিছিয়ে আছি এবং আধুনিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। পাহাড়ে স্টার লিংক চালু হলে শিক্ষা ব্যবস্থাসহ যাবতীয় জীবনে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হবে।

রাঙামাটি আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল রণি ধর বলেন, আধুনিক বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে উন্নত প্রযুক্তি সেবা পাওয়ার কারণে। আমাদের এখানে প্রযুক্তি সেবা না থাকায় শিক্ষাখাত থেকে শুরু করে সার্বিক সকল খাতে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। সরকার যখন শিক্ষাখাতের উন্নয়নে দুর্গম এলাকার বিদ্যালয়গুলোতে স্টারলিংক সেবা চালু করছে শুনে আমাদের মধ্যে অনেক ভাল লাগছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা উন্নত এবং আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার সুবিধা পাবে।

রাঙামাটি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার আল হক বলেন, পাহাড়ের শিক্ষা ব্যবস্থা সবসময় সমতলের চেয়ে পিছিয়ে ছিল। বর্তমান সরকার তথ্য প্রযুক্তি উন্নয়ন ঘটিয়ে অত্র অঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের বিপ্লব ঘটাতে যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। তবে আমি মনে করছি প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটাতে চাইলে আগে প্রযুক্তি পরিচালনা করার জন্য দক্ষকর্মী তৈরি করতে হবে। তা না হলে এ কার্যক্রম থমকে যেতে পারে।

পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষা খাতের উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের টেকসই উন্নয়নের জন্য কোয়ালিটি এডুকেশনের বিকল্প নেই। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষিত পরিকল্পনা অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে স্টারলিংক ব্যবহারের মাধ্যমে ১শ’টি স্কুলে ডিজিটাল কার্যক্রম চালু করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম চালু হয়েছে এবং আগামী ৯০ দিনের মধ্যে ১শ’টি স্কুলে স্টারলিংক ব্যবহারে অনলাইন কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।

উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা আরও বলেন, বিভিন্ন ভাষাভাষী সম্প্রদায়ের ভাষা ও বর্ণমালাগুলো সংরক্ষণের জন্য প্রাইমারি স্কুল লেভেলে ভাষাভিত্তিক বই মুদ্রণ করা হচ্ছে এবং স্থানীয় ভাষা শিক্ষকদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।