ঢাকা, বুধবার, ২৬ চৈত্র ১৪৩১, ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০ শাওয়াল ১৪৪৬

রাশিফল

হাতের পিঠে ভাগ্য

জ্যোতিষী রুবাই | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৪
হাতের পিঠে ভাগ্য

আজ আমরা আলোচনা করব করপৃষ্ঠ বা হাতের তালুর উল্টা পিঠের কি কি লক্ষণ দেখে মানুষটির স্বভাব, ভবিষ্যত ও ভাগ্য সম্পর্কে তথ্য জানা যায়। ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন কিছু গ্রন্থে এই তত্ত্বগুলি সরল আকারে লেখা রয়েছে।

দীর্ঘ গবেষণার পর তৎকালীন পণ্ডিতেরা প্রকাশ করেন। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সেগুলি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায়।

ওই সব গবেষণার কিছু কিছু অংশ প্রাচীন পুঁথিপত্রে এখনও পাওয়া যায়। সেই টুকরো টুকরো অংশ একসঙ্গে জড়ো করে পাঠকদের জন্য কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো।

মনে রাখতে হবে এই তথ্যগুলি প্রাচীন পণ্ডিতেরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে গবেষণা করে তবেই প্রকাশ করেছিলেন। যতদূর জানা যায়, কয়েকশো বছর ধরে কয়েক লাখ মানুষের উপর গবেষণার পর তারা তদের গবেষণার ফলাফল সাধারণ মানুষের সামনে প্রকাশ করেন।

undefined


হস্তরেখা বিজ্ঞানে যেমন করতল, করতলের রেখা, আঙুল ও নখের সূক্ষ্ম অধ্যয়ন করা হয়, তেমনই করপৃষ্ঠ অর্থাৎ হাতের পিছনের অংশেরও গভীর বিশ্লেষণ করা হয়। এর আকার-প্রকারে ব্যক্তির ক্ষমতা, যোগ্যতা, স্বভাব, গুণ, দোষ বিবেচনা করা যায়। সামুদ্রিক শাস্ত্রে করপৃষ্ঠের গঠন, প্রকারের বিরাট মহত্ব রয়েছে।

প্রাচীন পুঁথিপত্রে একটি সংস্কৃত শ্লোক পাওয়া যায়। যেটিকে সমুদ্র শাস্ত্রের অতি প্রামাণ্য শ্লোক হিসেবে ধরা হয়। সেটি হলো

হস্তপৃষ্ঠং সর্পফনাকারং রোম বিবর্জিতম।
শ্রেষ্ঠ মাংসলমুচ্চাংগং মণিবন্ধাকিতং শভম্।

অর্থাৎ, যে মানুষের করপৃষ্ঠ সর্পাকৃতি, লোম বর্জিত, মাংস যুক্ত তথা মণিবন্ধের তুলনায় উঁচু সেই ব্যক্তি শুভ ফল প্রাপ্ত করে।

এমন মানুষ উত্তম গুণযুক্ত। সাপের ফণার আকারের কর পৃষ্ঠকে শ্রেষ্ঠ মনে করা হয়। মণিবন্ধ বলতে আমারা যাকে চলতি কথায় কব্জি বলি সেই অংশটিকে বলা হয়।

আপর একটি শ্লোক যেটির ব্যবহার আজকের আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত জ্যোতিষ ব্যাখ্যায় যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয় সেটি হলো

অথ শস্তং কর পৃষ্ঠং বিস্তীর্ণ পীনমুন্নতং স্নিগ্ধং।
নিগূঢ় শিরং পরিতঃ ক্ষোণিপতেঃ ফণিফণাকারম্। ।

অর্থাৎ, রাজা ও কুলীন ব্যক্তির করপৃষ্ঠ উচ্চ, ঘন আকারের, স্নিগ্ধ এবং শিরা দেখা যায় না। প্রাচীন গ্রন্থে উঁচু করপৃষ্ঠকে শ্রেষ্ঠ মনে করা হয়। তবে শুধু উঁচু হওয়ায়ই যথেষ্ট নয়।

undefined



করপৃষ্টের রঙের বিষয়েও সমুদ্র শাস্ত্রে বলা আছে। আপনি লক্ষ করলে দেখতে পাবেন প্রতিটি মানুষের হাতের করপৃষ্ঠের রং একটু একটু করে আলাদা। সমুদ্র শাস্ত্রের রচয়িতারা জানিয়েছেন

বিবর্ণ পুরুষং রুক্ষংরোমশং মাংসবর্জিতম্।
মণিবন্ধ সমং নিম্নং ন শ্রেষ্ঠ কর পৃষ্ঠম্।

অর্থাৎ বিবর্ণ, শুকনো, লোম যুক্ত, মাংসহীন, মণিবন্ধের স্তরের তুলনায় নিম্ন করপৃষ্ঠ শ্রেষ্ঠ এবং শুভ ফল প্রদান করে না।

স্কন্দ পুরাণ ভারতীয় উপমহাদেশের একটি অতি প্রাচীন গ্রন্থ। স্কন্দ পুরাণে বলা হয়েছে, যে স্ত্রীর করপৃষ্ঠ রোম যুক্ত, শিরাযুক্ত, মাংস ছাড়া হয়, তাদের জীবন কষ্ট জর্জরিত ও সংঘর্ষময়।

লোম
করপৃষ্ঠে লোম থাকা শুভ লক্ষণ নয়। করপৃষ্ঠ লোমমুক্ত হলে, ব্যক্তি ভাগ্যশালী, ঐশ্বর্যবান, সক্ষম, যোগ্য ও সফল হয়। করপৃষ্ঠে ছোট ছোট ও অল্প লোম থাকলে, তা কিছুটা সমস্যা হলেও, পরে ভবিষ্যৎ খুব ভালো হয়। অল্প লোম যুক্ত ব্যক্তি অল্পবিস্তর সংঘর্ষের পর যথেষ্ট পরিমাণে সুখ ভোগ করেন। তবে করপৃষ্ঠে কঠিন ও লম্বা লোম থাকে, তা হলে সেই জাতককে অনেক সংঘর্ষের সম্মুখীন হতে হয়। এমন ব্যক্তির ভাগ্য তাদের সঙ্গ দেয় না। এঁদের পুরোপুরি কর্মে নির্ভর থাকতে হয়।

শিরা
করপৃষ্ঠে সবুজ, সাদা বা যে কোনো রঙের শিরা দেখা যাওয়া শুভ নয়। শিরা ছাড়া করপৃষ্ঠ সব সময় শুভ। এই অশুভ ভাবগুলি কি কি এবং কীভাবে তার প্রতিকার পাওয়া যায় সেকথাও লিখে গেছেন পণ্ডিতেরা।

undefined


নিম্ন করপৃষ্ঠ
মণিবন্ধের তুলনায় নিচু করপৃষ্ঠ খুব অশুভ। কর পৃষ্ঠে গর্তের মতো স্থিতিও শ্রেষ্ঠ ফল দেয় না। জীবনে সংঘর্ষ, সংকট, উৎসাহহীনতা এবং অর্থাভাবের ইঙ্গিত দেয়।

উচ্চ করপৃষ্ঠ
উচ্চ করপৃষ্ঠ সমস্ত সুখ দেয়। যাদের করপৃষ্ঠ উঁচু, তারা জীবনে সমস্ত বৈভব ও আনন্দ ভোগ করেন। এরা ভাগ্যশালী, ঐশ্বর্যবান, শক্তিশালী ও ভূপতি হন।

সমতল করপৃষ্ঠ
মণিবন্ধের স্তরের করপৃষ্ঠ শুভ ও অশুভ দুই ফলই দেয়। যদি মাঝখানের করপৃষ্ঠ ভিতরের দিকে ঢুকে থাকে, তাহলে এটি অর্থহানি ও রোগের ইঙ্গিত দেয়। তবে কোনো কোনো জায়গায় করপৃষ্ঠ যদি মণিবন্ধের তুলনায় উঁচু হয়, তাহলে এই স্থিতি ছোট ছোট লাভের ক্ষেত্রে সহায়ক।

করপৃষ্ঠের আরও কিছু বৈশিষ্ট্য প্রাচীন শাস্ত্রকাররা তাদের গবেষণায় জানিয়েছিলেন। তার কিছু কিছু পাওয়া গেলেও অনেক অংশই হারিয়ে গেছে। তবে বিভিন্ন প্রাচীন পুঁথি, পুরাণে আজও টুকরো টুকরোভাবে এই তথ্যগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। যাকে একত্র করা চেষ্টা চালাচ্ছি আমরা। এই কাজ করা সম্ভব হলে হয়তো আগামী দিনে আরও কিছু প্রামাণ্য তথ্য পাঠকদের সামনে হাজির করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০০০১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।