ঢাকা, সোমবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২০ রবিউস সানি ১৪৪৭

স্বাস্থ্য

অপরিকল্পিত রাসায়নিক ব্যবহারে বাড়ছে অটিজম রোগীর সংখ্যা

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭:১৯, এপ্রিল ২, ২০১৯
অপরিকল্পিত রাসায়নিক ব্যবহারে বাড়ছে অটিজম রোগীর সংখ্যা ছবি: বাংলানিউজ

সিরাজগঞ্জ: আবাসিক এলাকায় অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও ক্ষুদ্র বা মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানে ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক ব্যবহার করাতে পরিবেশ দুষণের ফলে সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চলে অটিস্টিক রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। শিল্পকারখানা থেকে নির্গত মারাত্বক ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক পদার্থ নদী, পুকুর কিংবা ভূগর্ভস্থ পানির সাথে মিশে যাচ্ছে। আর এসব পানি নানাভাবে ব্যবহার ও পান করার কারণেই মাতৃগর্ভে জন্ম নিচ্ছে অটিস্টিক শিশু। এছাড়াও জটিল নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, কামারখন্দ, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর অঞ্চলে অসংখ্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। এসব শিল্পকারখানার বেশিরভাগেরই বর্জ্য শোধনাগার নেই।

ফলে দূষিত বর্জ্য চলে যাচ্ছে নদী, খাল কিংবা পুকুরে। অপরদিকে তাঁত সমৃদ্ধ  বেলকুচি, এনায়েতপুর, শাহজাদপুর ও সিরাজগঞ্জ সদরের আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠেছে শত শত প্রসেসিং  অ্যান্ড ডায়িং কারখানা।  

এসব কারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত কেমিক্যাল এলাকার জলাশয়ে ফেলা হচ্ছে। এ কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়ছে। নলকূপ চাপলেই বেড়িয়ে আসছে দূষিত পানি। বাধ্য হয়ে এলাকার মানুষকে সেই পানিই পান করতে হচ্ছে।  

স্থানীয়দের অভিযোগ, বাধ্য হয়ে দূষিত পানিতে কাপড়-চোপড়, থালা-বাসন পরিষ্কার ও গোসল করতে হচ্ছে। হাতের কাছে অন্য কোনো সুপেয় পানির উৎস না থাকায় নলকূপ থেকে দূষিত পানি পান করতে হচ্ছে তাদের। এসব বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই বলেও অভিযোগ তাদের।  

এ বিষয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ এবং শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, গর্ভবতী মা যদি ডিজেল অক্সিজেন, ম্যাংগানিজ, ফসফেট, সীসা, অতিমাত্রায় আয়রন ও আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করেন তবে তার গর্ভে থাকা সন্তান অটিজমের শিকার হতে পারে। আবার এই পানি শিশুরা পান করলে তাদেরও এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।  

ছবি: বাংলানিউজসিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা ফারজানা তাজ জানান, সিরাজগঞ্জ জেলায় প্রায় ৪০ হাজার প্রতিবন্ধী রয়েছে। যার মধ্যে ২৫ ভাগ শিশুই অটিজম রোগী। এসব অটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসাসেবা ও সুযোগ সুবিধা দিলে অভিভাবকরা স্বস্তি পাবেন।

সিরাজগঞ্জ স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ডা. জহুরুল হক রাজা জানান, সিরাজগঞ্জে শিল্প কারখানায় বর্জ্য শোধনাগার ব্যবস্থা নিশ্চিত ও আবাসিক এলাকায় ডায়িং অ্যান্ড প্রসেসিং বন্ধ না করলে ভবিষ্যত প্রজন্ম আশঙ্কাজনকভাবে অটিজমসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবে।  

সিরাজগঞ্জ জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তবিবুর রহমান তালুকদার জানান, তাঁত শিল্প এলাকার সুতা প্রসেস ও ডাইং মিলের বিষাক্ত বর্জ্য মিশ্রিত পানি সরাসরি নলকূপের পাইপ দিয়ে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরে মিশিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে এই অঞ্চলের নলকূপের পানিতে মারাত্মক রাসায়নিক দ্রব্য পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৩১৯ ঘন্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৯
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।