বরিশাল: মাত্র চারদিনে ৯৫টি অচল মেশিন সচল করার পর এবার বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল কম্পাউন্ড থেকে অবৈধ অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট উৎখাত করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনের ২৩তম দিনে এ অভিযান পরিচালনা করেন হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. একেএম মশিউল মুনীর।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগে খুশি রোগী ও স্বজনরা। তারা বলছেন, আগে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে ইচ্ছামতো অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করা যেত না। ভাড়া নিয়ে বাড়তি হয়রানিও হতো। এখন সেসব থেকে মুক্তি মিলবে। তবে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকরা বলছেন, এতে রোগীদের ভোগান্তি বাড়বে।
জানা গেছে, শেবাচিম হাসপাতালে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে প্রায় ১০০টি অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করে। এর মধ্যে প্রায় ২০টি মাইক্রোবাস অবৈধভাবে অ্যাম্বুলেন্সে রূপান্তর করা। এইসব মিলে গড়ে ওঠে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট, যারা রোগীদের জিম্মি করে বাড়তি ভাড়া আদায় করতো। অভিযোগ রয়েছে, এই সিন্ডিকেটের ছত্রছায়ায় হাসপাতাল চত্বরে মাদক সেবন ও বেচাকেনার আস্তানাও গড়ে ওঠে। রাজনৈতিক প্রভাব থাকায় এতদিন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
হাসপাতালের পরিচালক বলেন, এখন থেকে কোনো বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স রোগী নামিয়ে দিয়ে হাসপাতাল চত্বরে অবস্থান করতে পারবে না। সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা বাড়িয়ে জরুরি বিভাগ সংলগ্ন এলাকায় ৭টি অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং করা হয়েছে। নির্ধারিত ভাড়ায় (সিটির মধ্যে ৩০০ টাকা, সিটির বাইরে প্রতি কিলোমিটারে ১০ টাকা) এসব অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেবে, যা বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের তুলনায় অনেক কম।
এদিকে ন্যাশনাল ইলেকট্রো ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (নিমিউ অ্যান্ড টিসি) থেকে আগত ৭ সদস্যের কারিগরি টিম চারদিনে ৯৫টি অচল মেশিন সচল করেছেন। রেডিওলজি, ইমেজিং, প্যাথলজি, সিসিইউ, আইসিইউ, অপারেশন থিয়েটার, চক্ষু, সার্জারি ও নাক-কান-গলা বিভাগে এসব মেরামত কাজ হয়েছে।
পরিচালক জানান, ইতোমধ্যে সচল হওয়া মেশিনগুলো রোগীদের সেবায় ব্যবহার শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও ২০টি গুরুত্বপূর্ণ মেশিন (এনজিওগ্রাম, সিটি স্ক্যান, এক্সরে, লেসিক, ওসিটি, লিথোট্রিপটর, এন্ডোস্কপি) সচল করার প্রক্রিয়াও হাতে নেওয়া হয়েছে। কিছু যন্ত্রাংশ বিদেশ থেকে আমদানির প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
কারিগরি টিমের সদস্য উপ-সহকারী প্রকৌশলী (অপটিক্যাল) হাফিজুর রহমান জানান, ৬টি অ্যানেস্থেসিয়া মেশিন, ২৫টি সাকশন মেশিন, ১০টি আইসিইউ ভেন্টিলেটর, ৫টি অটোক্লেভ, ১টি সি-আর্ম মেশিন, ২টি মনিটর, ৮টি ওটি টেবিল, ৫টি ব্লাড ব্যাংক রেফ্রিজারেটর, ১০টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা, ৫টি আইসিইউ বেড, ৬টি ওটি লাইট, ৫টি ডেন্টাল ইউনিট, ২টি ডায়াথার্মি মেশিন, ৪টি ইসিজি মেশিন ও ১টি এক্সরে মেশিনসহ মোট ৯৫টি মেশিন সচল করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শিগগিরই একটি করে ইকো, ডিফাইব্রিলেটর, কার্ডিয়াক মনিটর, এনজিওগ্রাম, সিটি স্ক্যান, চোখের লেসিক, ফ্যাকো, ওসিটি, লিথোট্রিপটর, এন্ডোস্কপি ও এক্সরে মেশিন চালু করা হবে। যন্ত্রাংশের অভাবে কিছু মেশিন বন্ধ ছিল। সেগুলোর জন্য বিদেশ থেকে যন্ত্রাংশ সরবরাহের চেষ্টা চলছে।
দক্ষ টেকনিশিয়ান ও জনবলের ঘাটতিও একটি বড় সমস্যা বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এমএস/এসআইএস