১৯৭১ সাল। সারা বাংলাদেশ তখন মুক্তির জন্য যুদ্ধ করছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে।
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) গতকাল রাতে চার শতাধিক রাজনীতিবিদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল করে একটি সংশোধিত অধ্যাদেশ জারি করেছে। একইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারসহ আরও চার শ্রেণির স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় পরিবর্তন করে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের আওতায় স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকেও রাখা হয়েছে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়।
এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অনেক সদস্য। দলের অন্যতম সদস্য আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘এটা কখনোই হওয়া উচিত নয়। আমরা একটি সেক্টর হিসেবে কাজ করেছি। স্পোর্টস সেক্টরে আমরা সরাসরি যুক্ত ছিলাম। এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত হতাশাজনক। আমরা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে আপত্তি জানিয়েছি। ’
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল ১৯৭১ সালের মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ভারতজুড়ে ১৬টি প্রীতি ম্যাচ খেলেছিল। কলকাতা, শিলিগুড়ি, কৃষ্ণনগর, আসানসোল, কোচবিহারসহ পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের বিভিন্ন শহরে। এসব ম্যাচের মাধ্যমে তারা শুধু অর্থ সংগ্রহই করেননি, বরং লাখো মানুষকে সচেতন করেছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কে। প্রতিটি খেলার আগে ও পরে বাজানো হতো স্বাধীন বাংলাদেশের গান ও উত্তোলন করা হতো জাতীয় পতাকা। যা জাগিয়ে তুলত দেশপ্রেম।
তবে সহ-অধিনায়ক প্রতাপ শঙ্কর হাজরা এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন সহজভাবে। তিনি বলেন, ‘আমরা বল পায়ে স্বাধীনতার বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দিয়েছি। যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছে, তারা সরাসরি মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পাচ্ছে। আমরা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচিত হলেও আমার কোনো ক্ষোভ নেই। ’
তবে অনুভূতির দিক থেকে কিছুটা খারাপ লাগা আছে বলেও স্বীকার করেন তিনি, ‘ক্ষোভ নেই, তবে কিছুটা খারাপ লাগা তো থাকেই। মুক্তিযোদ্ধা থেকে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা, একটু তো খারাপ লাগেই। ’
স্বাধীনতার পর অনেক খেলোয়াড় মাঠে ফিরে আসেন, কেউ কেউ অবসর নেন। তবে ইতিহাসে তারা থেকে যান জাতির যোদ্ধা হিসেবে। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এই দল কেবল একটি ক্রীড়া দল নয়, বরং এক অনন্য অনুপ্রেরণার নাম। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অবদান ইতিহাসে যতটুকু লেখা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি রয়ে গেছে অনুলিখিত। এটি ছিল ফুটবলের ভাষায় স্বাধীনতার কথা বলা। যেখানে প্রতিটি গোল ছিল বিজয়ের প্রতীক। এই দলটির আত্মত্যাগ ও ভূমিকা বাঙালির জাতীয় চেতনার অমূল্য সম্পদ।
এআর/আরইউ