ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ কার্তিক ১৪৩২, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৭

ফিচার

কাঁদি ভরা খেজুর গাছে, পাকা খেজুর দোলে

মাহবুবুর রহমান মুন্না, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০:৫৩, জুন ৯, ২০১৫
কাঁদি ভরা খেজুর গাছে, পাকা খেজুর দোলে ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খুলনা: কাঁদি ভরা খেজুর গাছে/পাকা খেজুর দোলে/ছেলেমেয়ে, আয় ছুটে যাই/মামার দেশে চলে।

পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের ‘মামার বাড়ি’ কবিতার এ লাইনগুলোর কথা মনে পড়ে যাবে খুলনার রূপসা উপজেলার যে কোনো গ্রামে গেলে।

বিশেষ করে তিলক, পাথরঘাটা, শ্রীফলতলা, আইচগাতী, কাজদিয়া, নৈহাটী, হারানের খাল, গুপিয়ার খাল, পয়াতীর পোল, পচাখাল এলাকায় গেলে দেখা মিলবে সারি সারি খেজুর গাছে কাঁচাপাকা খেজুর দোলার দৃশ্য।

প্রাচীনতম ফলের মধ্যে অন্যতম এ দেশি খেজুর স্বাদ অনন্য হওয়ায় গাছে ফল পাকলেই কিশোরদের দুরন্তপনার বেড়ে যায়।

নৈহাটী এলাকার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক তৈহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, খুলনায় ঐতিহ্যগতভাবেই খেজুরের গাছ বেশি। ফলনও ভালো। তবে রূপসার কাজদিয়া, নৈহাটী, হারানের খাল, গুপিয়ার খাল, পয়াতীর পোল, পচাখাল এলাকায় সবচেয়ে বেশি খেজুর গাছ আছে। এসব গাছে এবার ফলও ধরেছে প্রচুর।

আইচগাতি এলাকার কিশোর নাজমুল বলেন, খেজুর গাছে উঠে খেজুর খেতে খুব ভালো লাগে। এছাড়া পেকে তলায় পড়ে থাকা খেজুর দল বেধে কুড়ানোর মজাই আলাদা।

তিলক এলাকার প্রবীন কৃষক আব্দুল্লাহ জানালেন, আগে খুলনার ৯ উপজেলায় প্রচুর খেজুর গাছ ছিলো। এখন অনেক উপজেলায় খেজুর গাছ নেই বললেই চলে। ইটভাটায় জ্বালানির হিসেবে ব্যবহারের ফলে এখন খেজুর গাছ বিলুপ্তির পথে।

তিনি জানান, রূপসায় যেসব খেজুর গাছ আছে, তাতে এ বছর প্রচুর ফল ধরেছে। যা ইতোমধ্যে পাকতে শুরু করেছে। অনেকে গ্রাম থেকে খেজুর নিয়ে খুলনা শহরে বিক্রি করতেও শুরু করেছেন।  

সাধারণত খেজুর গাছ কেউ রোপন করেন না। মানুষ ও পাখ-পাখিরা খেজুর খেয়ে মাটিতে বীজ ফেললে সেটা থেকে গাছের জন্ম হয়, জানান তিনি।

কালিবাড়ি এলাকার বাসিন্দা হরিপদ দাস বললেন, খেজুর গাছ যে কেবল ফল দেয় তা কিন্তু নয়। শীত মৌসুমে খেজুর গাছ থেকে রস পাওয়া যায়। যা দিয়ে গুড় তৈরি হয়। খেজুরের রসও কিন্তু সবাই পছন্দ করে। খেজুর রস ও গুড়ের তৈরি পিঠাতো বাঙালির ঐতিহ্যের অংশ। খেজুর গাছের পাতা দিয়ে পাটি ও কাঁচা ঘরের বেড়া তৈরি করা হয়। এছাড়া খেজুর পাতা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

রূপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরীফ ইসমাইল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে রূপসা উপজেলার ২৫ হেক্টর জমিতে খেজুর গাছ রয়েছে। আগে এ এলাকায় আরও বেশি ছিলো। নানা কারণে খেজুর গাছ কমে গেছে।

ঐতিহ্যবাহী খেজুর রস, খেজুর গুড় কিংবা খেজুর পেতে হলে প্রতি বছর বৃক্ষরোপনের সময় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে খেজুর গাছ রোপনের ওপর জোর দেন তিনি।

খেজুরের পুষ্টিগুণ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. মো. রেজাউল করীম বাংলানিউজকে বলেন, খেজুর আরবদের প্রধান ফল। এ খেজুরেরই একটা জাত জন্মে আমাদের দেশে, যার ফল আমরা খাই। এ দেশি খেজুরের রঙ হলুদ থেকে খয়েরি বর্ণ ধারণ করলে ফল সংগ্রহের উপযুক্ত হয়।

ঋতু পরিবর্তনের সময় যেসব রোগ হয় সেগুলো প্রতিরোধে দেশি ফল খাওয়া প্রয়োজন। মৌসুমি ফল মৌসুমি রোগ প্রতিরোধ করে। দেশি ফলের পুষ্টি বেশি।

সেজন্য দেশি খেজুর খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫০ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০১৫
এমআরএম/আরএম/এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।