১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি সকালে একটি ফোন এল। অপরিচিত একজন জানাল ঢাকা মিরপুরের ১২ নম্বর সেকশনের একটি বাড়িতে আপনার বড় ভাই শহীদুল্লা কায়সারকে বন্দি করে রাখা হয়েছে।
‘ফোনটি যে ৩০ জানুয়ারিই প্রথম এসেছিল তা নয়। এ ফোন আসা শুরু করে ২৫ জানুয়ারির পর থেকে। কারণ সেদিন এক সংবাদ সম্মেলনে অনেকটা নায়কোচিতভাবে আমার বাবা বলেছিলেন এমন কিছু দলিল তিনি প্রকাশ করবেন যা পাকিস্তানি বাহিনী, জামায়াত, রাজাকার-আলবদর বা শান্তিবাহিনীর অমানবিকতা এবং মানুষহত্যার নীল নকশা প্রকাশ করবে।
এ দলিল খন্দকার মুশতাক আহমেদের মতো আরো অনেক মন্ত্রীর কুকর্মও প্রকাশ করবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। এ বক্তব্যের পর থেকে বিভিন্ন ফোন আসতে থাকে তাকে মিরপুরে নেওয়ার জন্য।
আমি এ সরকারের কাছে দাবি জানাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সাথে যেন বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচারও সম্পন্ন করেন। ’
কথাগুলো বলেন জহির রায়হানের ছেলে অনল রায়হান। তিনি ৩০ জানুয়ারি রোববার বিকেলে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের শহীদ আলাউদদীন জহিন মঞ্চে জহির রায়হানের অন্তর্ধান দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ‘বাংলাদেশ ফিল্ম আকাইভ অ্যালামনাই এসোসিয়েশন’।
অনুষ্ঠানটি ‘জহির রায়হানের অন্তর্ধান ও সঙ্কটে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র’ শিরোনামের মনিস রফিকের একটি লিখিত প্রবন্ধ পাঠের মাধ্যমে শুরু হয়।
জহির রায়হানের বাবার দেওয়া নাম মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ। প্রখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা মণি সিং তাকে ডাকতেন রায়হান বলে। দুই নামের মিশ্রণে নিজেই নিজের নাম রাখলেন জহির রায়হান। এভাবেই এ রচনায় ওঠে আসে তার জীবন এবং কাজ।
আলোচনা অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক চলচ্চিত্রকার মোরশেদুল ইসলাম। আলোচনা করেন সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক কামরুন নাহার, পরিচালক মসিউদ্দিন শাকের, কবি কাজী রোজী এবং মানজারে হাসীন মুরাদ। আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে জহির রায়হান পরিচালিত ‘কখনো আসেনি ফিরে’ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র ‘স্টপ জেনোসাইড’ প্রদর্শন করা হয়।
বাংলাদেশ সময় ২২০০, জানুয়ারি ৩০, ২০১১