ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২, ৩১ জুলাই ২০২৫, ০৫ সফর ১৪৪৭

ফিচার

‘ভগ্নহৃদয়’ নিয়ে যেতে পারে মৃত্যুর দুয়ারে, বলছে গবেষণা

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:১৮, জুলাই ৩০, ২০২৫
‘ভগ্নহৃদয়’ নিয়ে যেতে পারে মৃত্যুর দুয়ারে, বলছে গবেষণা সংগৃহীত ছবি

প্রিয়জন হারানোর গভীর শোক শুধু মানসিক নয়, প্রাণঘাতীও হতে পারে। ডেনমার্কের নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই ভয়াবহ তথ্য।

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দীর্ঘ সময় ধরে তীব্র শোক বয়ে বেড়ান, তাদের মৃত্যুর আশঙ্কা প্রায় দ্বিগুণ।

ডেনমার্কের গবেষকরা জানিয়েছেন, যেসব মানুষ প্রিয়জনকে হারিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গভীর শোকের মধ্যে থাকেন, তারা সাধারণের তুলনায় বেশি স্বাস্থ্যসেবা নিতে বাধ্য হন এবং তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি ৮৮ শতাংশ বেশি।

তারা প্রিয়জনকে হারানোর পর মানুষের মধ্যে দেখা যাওয়া শোকের পাঁচটি ভিন্ন প্রবণতা শনাক্ত করেছেন এবং দেখতে পেয়েছেন, যারা সবচেয়ে বেশি শোকাহত হন, তাদের আগেভাগেই মৃত্যুর আশঙ্কা বেশি থাকে।

গবেষণার সহ-গবেষক মেটে কেয়ারগার্ড নিলসেন বলেন, আমরা আগেও দেখেছি, তীব্র শোক হৃদরোগ, মানসিক সমস্যার ঝুঁকি এবং আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ায়। তবে মৃত্যুর সঙ্গে এই যোগসূত্র আরও গভীরভাবে অনুসন্ধান করা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, যারা তীব্র শোকপ্রবণতার ঝুঁকিতে থাকেন, তাদের শুরুতেই শনাক্ত করা সম্ভব।

মেটে কেয়ারগার্ড নিলসেন আরও বলেন, একজন চিকিৎসক যদি দেখেন রোগীর আগে থেকেই বিষণ্নতা বা অন্য কোনো গুরুতর মানসিক সমস্যা রয়েছে, তাহলে তিনি সহজেই বুঝতে পারবেন—এই রোগী তীব্র শোকের পর্যায়ে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে চিকিৎসক রোগীর মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি বাড়তি নজর দিতে পারেন।

তাকে নিয়মিত চেকআপে ডাকার ব্যবস্থা করতে পারেন, অথবা প্রয়োজনে কোনো মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা কাউন্সিলরের কাছে পাঠিয়ে দিতে পারেন। এ ছাড়া, চিকিৎসক চাইলে রোগীকে ‘শোকপরবর্তী মানসিক পরামর্শ সেশন’-এ অংশ নিতে উৎসাহিত করতে পারেন, যেখানে শুধু মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েই আলোচনা হবে, বলেন নিলসেন।

গবেষকরা ডেনমার্কে বসবাসরত এক হাজার ৭৩৫ জন শোকাহত নারী ও পুরুষের একটি দলকে দশ বছর ধরে (২০১২ সাল থেকে) পর্যবেক্ষণ করেন। তাদের গড় বয়স ছিল ৬২ বছর। এই সময়ের মধ্যে তাদের নিয়মিত কিছু প্রশ্ন পাঠানো হয়, যেগুলোর মাধ্যমে তাদের শোকের লক্ষণ এবং অভিজ্ঞতা মূল্যায়ন করা হয়। এতে গবেষকরা বুঝতে সক্ষম হন, তারা স্থায়ীভাবে কতটা শোকে ভুগছেন।

এই দলের মধ্যে ৬৬ শতাংশ সম্প্রতি তাদের জীবনসঙ্গীকে হারিয়েছেন, ২৭ শতাংশ তাদের পিতামাতাকে, এবং ৭ শতাংশ অন্য কোনো প্রিয়জনকে হারিয়েছেন।

এদের মধ্যে ৬ শতাংশ লোকের শোক খুব বেশি এবং দীর্ঘস্থায়ী ছিল। ১০ বছরের মধ্যে তাদের মারা যাওয়ার শঙ্কা ৮৮ শতাংশ বেশি ছিল, যাদের শোকের মাত্রা কম ছিল তাদের তুলনায়, তাদের হার ৩৮ শতাংশ। যারা বেশি শোকে ভুগছিলেন, তারা শোকপ্রাপ্তির পর তিন বছর ধরে তুলনায় বেশি স্বাস্থ্যসেবা নেন।

তাদের কথা বলার থেরাপি বা অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল ১৮৬ শতাংশ বেশি, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল ৪৬৩ শতাংশ বেশি এবং উদ্বেগ বা ঘুমের ওষুধ পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল ১৬০ শতাংশ বেশি।

আরএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।