ঢাকা, রবিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২, ১২ অক্টোবর ২০২৫, ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৭

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

 লাউয়াছড়ায় ‘গ্যানোর্ডামা’ ছত্রাকের রাজত্ব

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:৫০, নভেম্বর ৯, ২০১৮
 লাউয়াছড়ায় ‘গ্যানোর্ডামা’ ছত্রাকের রাজত্ব পঁচা কাঠ থেকে গজানো গ্যানোর্ডামা। ছবি : শ্যামল দেববর্মন

মৌলভীবাজার: বনভ্রমণের এক ফাঁকে হঠাৎ চোখে পড়ে ব্যাঙের ছাতা! মাটি চিরে নিজের আপন সৌন্দর্য ধরে রেখেছে বেশ। কখনও ঘন বাতাসের আবরণে উঠছে দুলে। লোকমুখে রচিত সেই ‘ব্যাঙের ছাতা’র উদ্ভিদতাত্ত্বিক নামই হলো ছত্রাক। 
 

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের বনভ্রমণে এমন ছত্রাকের উপস্থিতিই মিলবে যেখানে-সেখানে। পুরাতন অবশিষ্ট গাছ বা কাঠের অংশে তারা হঠাৎ গজিয়ে মাথা উঁচু করে প্রকৃতিকে দেখতে থাকে।

ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া হলো প্রকৃতি ও পরিবেশের অন্যতম বন্ধু। পচনশীল বস্তুকে এরা ভেঙেচুড়ে সরল বস্তুতে পরিণত করে।
 
স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় পরিত্যক্ত কাঠ অথবা গাছের অংশ প্রভৃতি যখন দিনের পর দিন পড়ে থাকে তখন আর্দ্রতা, তাপমাত্রা, পানি ইত্যাদি অনুকূল পরিবেশ পেলে ওইগুলো থেকে ছত্রাক জন্মলাভ করে।
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর এবং উদ্ভিদ গবেষক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘পরিপোর’ ছত্রাকের একটা জেনাস (গণ) হলো ‘গ্যানোডার্মা’ ছত্রাক। এর পরিবার হলো ‘গ্যানোডার্মেসি’। গ্যানোডার্মা গণের প্রায় ৮০টির মতো প্রজাতি পাওয়া যায় আমাদের দেশের ট্রপিক্যাল রেইন ফরেস্ট বা চিরসবুজ বনগুলোতে।
 
তিনি আরও বলেন, এরা উচ্চ শ্রেণির কাঠপাচনকারী ছত্রাক। এরা পচা কাঠের উপর জন্মে। এ ছত্রাকের কাজ হলো- সে এই পঁচা কাঠ থেকে উৎপন্ন হয়ে নিজের খাবার খাবে এবং বাকিটা সে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেবে।
 
ইকো-সিস্টেম অর্থাৎ বাস্তুসংস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইকো সিস্টেমের তিনটি ধাপ রয়েছে; প্রডিউসার (উৎপাদক), কনজ্যুমার (ভোক্তা বা খাদক) এবং তৃতীয়টি হচ্ছে ডি-কম্পোজার (বিয়োজনকারী)। আমাদের পরিবেশের ইকো-সিস্টেমে উৎপাদক এবং খাদক শ্রেণিরা যখন মরে যায়, তখন এদের ব্রেকডাউন (ভাঙন বা পচানো) করে বিয়োজনকারীরা। একটা জটিল বস্তুকে ভেঙেচুড়ে সরল বস্তুতে পরিণত করে ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া নামক বিয়োজনকারীরা।

তিনি আরও বলেন, সবুজ উদ্ভিদ হলো প্রডিউসার বা উৎপাদক। সবুজ উদ্ভিদগুলো সূর্যালোক, পানি, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, নাইট্রোজেন প্রভৃতি মাটির নিউট্রিয়ান্স বা খাদ্যকণিকাগুলো খেয়ে জীবনধারণ করে নিজেই খাদ্যবস্তুতে পরিণত হয়। এই প্রডিউসারগুলোকে খায় কনজ্যুমাররা অর্থাৎ ভোক্তা বা সব প্রাণি। এখন এই প্রাণিগুলো যখন মারা যায় তখন ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া সেই প্রাণিগুলোকে অর্থাৎ জটিল বস্তুকে ভেঙেচুড়ে সরল বস্তুতে অর্থাৎ মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়।
 
ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন জানান, ‘ডি-কম্পোজার অর্থাৎ বিয়োজনকারী ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের কাজই হলো উৎপাদক এবং খাদকরা মরে গেলেই তাদের উপর জন্ম নিয়ে তাদের খেয়ে ভেঙেচুড়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। কিছু খায়, আর কিছু ভেঙেচুড়ে সরল বস্তুতে পরিণত করে। সেই সরল বস্তু আবার পরিবেশে যায় তখন উৎপাদকরা তাকে খায়। সেই ইকো-সিস্টেমের (বাস্তুসংস্থান) একটা বিশেষ কম্পনেন্ট (উপাদান) হচ্ছে ছত্রাক।
 
‘ব্যাঙের ছাতা’র পপুলার নাম হলো মাশরুম। মাশরুমও এক ধরনের উচ্চ শ্রেণির ছত্রাক। এছাড়াও গ্যানোডার্মা, ইস্ট প্রভৃতি গ্রুপ রয়েছে ছত্রাকের। কিছু ছত্রাক খাবারযোগ্য, বাকিগুলো খাবার অযোগ্য। খাবারযোগ্য ছাত্রকগুলো পাহাড়ে বসবাসকারী নৃ-জনগোষ্ঠীরা চেনে বলে জানান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন।  
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৮ ঘণ্টা, ৯ নভেম্বর, ২০১৮
বিবিবি/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।