পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যগুলো ধ্বংস করেই আমাদের উন্নয়ন এগিয়ে চলেছে।
তিনি বলেন, আপনারা যারা তরুণ প্রজন্ম বা সংস্কৃতি মনা, যারা বিতর্ক করতে ভালোবাসেন তারা উন্নয়ন নিয়ে বিতর্ক করবেন।
শনিবার (২৩ আগস্ট) বিকেলে গাজীপুরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজিত জাতীয় পর্যায়ে অন্তঃকলেজ সাংস্কৃতিক ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, যে নদীগুলো দিয়ে আমাদের নিজেদের পরিচয় ডিফাইন করি, সেই নদীগুলো চোখের সামনে দূষিত হয়ে যাবে, মরে যাবে এটা তো কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার নয়। তাহলে আমার নিজের যে পরিচয়টা সেটাই আমরা অস্বীকার করি। প্রকৃতির সাথে আমাদের যে নিবিড় সম্পর্ক আছে, আমাদের সংস্কৃতিতে যার অনেক প্রতিফলন ঘটছে। আপনারা যারা সংস্কৃতির চর্চা করেন তেমন করে প্রকৃতির বার্তাটাও পৌঁছে দিতে পারেন সবার কাছে সেটা একটু মনে রাখবেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এএসএম আমানুল্লাহ। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রো ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর মো. লুৎফর রহমান, প্রো ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম ও ট্রেজারার প্রফেসর ড. এটিএম জাফরুল আযম প্রমুখ।
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, যারা বিতর্ক করেন তারা বলবেন মেগা প্রজেক্ট একমাত্র উন্নয়নের হাতিয়ার নাকি প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করে তার ওপর প্রজেক্ট নির্ভরতার দিকে আমরা যাবো। প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস করে কোনোভাবে কোনো মেগা প্রোজেক্ট আমরা করতে দেবো না। মেগা প্রজেক্ট করার আগে প্রকৃতির ওপর কি প্রভাব পড়বে সেটা বস্তু নিষ্ঠভাবে যাচাই করে নেবো। অপরিহার্য ও জাতীয় প্রয়োজন ছাড়া আমরা কোনোভাবেই গাছ কাটবো না, কোনোভাবেই বন ধরবো না। এই কথাগুলো বিতর্কের পর্যায়ে নিয়ে যাবেন।
তিনি বলেন, ধরে নিলাম এ দেড় বছর সব কাজ খুব সুন্দরভাবে হয়েছে। দেড় বছর পরে তাহলে কি হবে? এটা কিন্তু আমাদের এখন থেকে ভাবতে হবে যে, আমরা আসলে কি চাই। আমরা নদীর ক্ষেত্রে কি চাই পাহাড়ের ক্ষেত্রে কি চাই, বনের ক্ষেত্রে কি চাই, কৃষি জমির ক্ষেত্রে কি চাই। এই বিষয়গুলো নিয়ে যদি আমরা ভাবি তাহলে এই যে আপনারা বিতর্ক করেন বিতর্কের মাধ্যমে এই মূল্যবোধ যখন চর্চার ক্ষেত্রে হবে তখন কিন্তু যখনই যে প্রশাসক হোক না কেন সে রাষ্ট্রটা ওই ভাবেই চালাবে এটা ভেবে যে প্রকৃতি বিধ্বংসী কোনো কর্মকাণ্ড করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, মানুষ যখন মানুষের সাথে অন্যায় করে অবিচার করে, তার একটা বিচার দেওয়ার জায়গা আছে। আপনি ডিসি সাহেবের কাছে যেতে পারেন, আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু মানুষ যখন নদীর বিরুদ্ধে অত্যাচার করে, পাহাড় কেটে ফেলে, বনের মধ্যে আগুন লাগিয়ে চিংড়ি চাষ করে। তখন বনটা কোথায় যাবে, পাহাড়টা কোথায় যাবে নদীটা কোথায় যাবে ও বন্যপ্রাণীটা কোথায় যাবে?
এর আগে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও কোরআন তেলাওয়াত করা হয়। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন প্রতিযোগী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাংবাদিক ও প্রশাসনের বিভিন্ন লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি প্রতিযোগীদের মাঝে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন।
আরএস/এএটি