আধুনিক বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতের অন্যতম জীবন্ত কিংবদন্তি নকীব খান। একাধারে এই গায়ক, সুরকার, গীতিকার ও বাদ্যযন্ত্র শিল্পী দর্শদের উপহার দিয়েছেন ‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে’, ‘ভালো লাগে, জোসনা রাতে’ সহ অসংখ্য গান।
বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী নকীব খান গত ৫০ বছর ধরে বাংলা গানের জগতে অবদান রেখে আসছেন। তার সঙ্গীত জীবনের অর্ধশত উদযাপন উপলক্ষে জমকালো আয়োজন করেছে টেলিভিশন জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (টিজেএফবি)।
শনিবার (২৩ আগস্ট) সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত রাজধানীর একটি পাঁচ তারা হোটেলে চলে ‘নকীব খান ফিফটি ইয়ারস সেলিব্রেশন’ নামক এই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান। যেখানে নকীব খানকে শুভেচ্ছা জানাতে হাজির হন দেশের প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী, গীতিকার, সঙ্গীত পরিচালক, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বসহ অনেকে।
নকীব খানের সঙ্গীত জীবনের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক তথ্য সচিব সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ, ইউল্যাবের ভিসি প্রফেসর ইমরান রহমান, দৈনিক দেশ রূপান্তরের সম্পাদক কামাল উদ্দিন সবুজ, টাইমস অব বাংলাদেশের উপদেষ্টা সম্পাদক ইলিয়াস খান, দেশবরেণ্য কণ্ঠশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী, খুরশিদ আলম, ফেরদৌস ওয়াহিদ, রফিকুল আলম, গীতিকার রফিকুজ্জামান, হানিফ সংকেত, নাসিম আলী খান, জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, মাইলস ব্র্যান্ডের হামিন আহমেদ, ফুয়াদ নাসের বাবু, সংগীত পরিচালক মকসুদ জামিল মিন্টু, নজরুল সংগীতশিল্পী ফেরদৌস আরা, আনিসুর রহমান তনু, গীতিকার লিটন অধিকারী রিন্টু, শহীদ মোহাম্মদ জঙ্গী, পার্থ বড়ুয়া, সংগীতশিল্পী বাপ্পা মজুমদার, রবি চৌধুরী, মনির খান, আলম আরা মিনু, আঁখি আলমগীর, হুমাইরা বশির, অবসকিউরের টিপু, সংগীতশিল্পী ন্যান্সি, হাসান, মেজবাসহ অনেকেই।
অনুষ্ঠানে নকীব খানকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি তার দীর্ঘ সঙ্গীতজীবনের নানা দিক নিয়ে আলোচনা ও স্মৃতিচারণ করেন শুভানুধ্যায়ীরা। এর পাশাপাশি তার সুর, লেখা ও গাওয়া বিভিন্ন গানের পরিবেশন। নকীব খান নিজেই উপস্থাপন করেন সেসব গান।
অনুষ্ঠানে নকীব খানের বড় ভাই জালাল উদ্দিন খান জিলু বলেন, ছোটবেলায় নকীব কান্না করলে আমার মনে হতো হারমোনিয়াম বাজালে তার কান্না বন্ধ হয়ে যাবে। আব্বাকে বললে তিনি হারমোনিয়াম নিয়ে আসেন, তারপর দেখলাম হারমোনিয়াম বাজালেই নকীব কান্না বন্ধ করে দিতো। তার মানে ছোটবেলা থেকেই নকীবের মাঝে সুরের ব্যাপার ছিলো। সে পঞ্চাশ বছর ধরে গানের জগতে ভূমিকা রেখেছে। তার এই অবদানের জন্য তাকে ধন্যবাদ।
অনুষ্ঠান নিয়ে টিজেএফবির সভাপতি রেদুয়ান খন্দকার বলেন, নকীব ভাইয়ের সঙ্গীত জীবনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আমরা তাঁকে যেই সম্মাননা দিই না কেন তা কমই হবে।
অনুষ্ঠানে শুধু স্মৃতিচারণ নয়, ছিল গান আর আবেগঘন পরিবেশনা। অনেক শিল্পী মঞ্চে উঠে গেয়ে শোনান নকীব খানের জনপ্রিয় গানগুলো। নিজেই মাইক্রোফোন হাতে নকীব খান পরিবেশন করেন নিজের কালজয়ী সৃষ্টিগুলো।
স্বাধীনতার পরপরই জন্মস্থান চট্টগ্রামে শুরু হয় নকীব খানের সঙ্গীত যাত্রা। বড় ভাইয়ের ‘বালার্ক’ ব্যান্ডের গায়ক, পিয়ানোবাদক ও শিল্পী হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ। পরে ১৯৭৪ সালে যোগ দেন ‘সোলস’-এ। সেখানে প্রায় ১০ বছর ছিলেন। তার বাবা মারা যাওয়ার পর চট্টগ্রাম ছেড়ে চলে আসেন ঢাকায়। ১৯৮৫ সালে গড়ে তোলেন নিজের ব্যান্ড ‘রেনেসাঁ’। সেই থেকে ‘রেনেসাঁ’ নিয়েই শ্রোতাদের ভালোবাসা কুড়িয়ে যাচ্ছেন নকীব খান। ‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে’, ‘পুতুলের মতো করে সাজিয়ে’, ‘নদী এসে পথ’, ‘হৃদয় কাদামাটির কোনো মূর্তি নয়’, ‘ভালো লাগে জোছনা রাতে’, ‘ও নদী রে’, ‘আচ্ছা কেন মানুষগুলো’, ‘তুমি কি আজ বন্ধু’— এসব গান শুধু একটি প্রজন্ম নয়, একাধিক প্রজন্মের কাছে প্রিয় হয়ে আছে। আশির ও নব্বইয়ের দশকের তরুণেরা তাঁর গানকে জীবনের অংশ করে নিয়েছিলেন। প্রেম, বন্ধুত্ব কিংবা একাকীত্ব— সব অনুভূতির সঙ্গেই নকীব খানের সুর যেন মিশে গেছে।
সুরকার হিসেবেও তিনি ছিলেন অনন্য। তার সুর করা ‘তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে...’ কিংবা ‘এই মুখরিত জীবনের চলার বাঁকে...’ এবং অন্যান্য গানগুলো বছরের পর বছর ধরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে।
এসসি/এমজে