ঢাকা: বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার পথ রুখতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) করা ‘না’ ভোটের বিধান আনার উদ্যোগ বিএনপির প্রস্তাব নয়।
রোববার (১৭ আগস্ট) নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
নির্বাচন কমিশন একক প্রার্থীর আসনে না বিধান আনছে, এ নিয়ে আপনাদের অবস্থান কী এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না’ ভোটের ব্যাপারে আমরা এ প্রস্তাব কখনো করি নাই। আপনারা জানেন এটা এক-এগারো সরকারের সময়ে এটা ইন্ট্রোডিউস করা হয়েছিল। কিন্তু নিয়ম হলো যে যখন নির্বাচিত সরকার থাকে না বা ইন বিটুইন টু পার্লামেন্ট সেশন রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ করে। সেরকম করে আইন করা হয়েছিল না ভোটের বিধান। এবং একমাত্র ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই না ভোটের বিধানটা কার্যকর ছিল। কিন্তু আপনারা জানেন যে না ভোট খুব একটা পড়ে না আমাদের দেশে। এটা আমাদের কারো দাবির ভিত্তিতে হয় নাই। এটা কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতামতের ভিত্তিতে হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন যে, এরপরে ২০০৯ সালে যারা দায়িত্ব নিলেন তারা এক মাসের মধ্যে ওই অধ্যাদেশগুলি অনুমোদন করার কথা ছিল, তারা অনুমোদন করতে গিয়ে এই না ভোটের বিধানটা তারা অনুমোদন করেন নাই। ফলে এটা আইনে পরিণত হয় নাই। এখন যেটা প্রস্তাব করা হচ্ছে এটা আবার একটা নতুন প্রস্তাব এবং এটা আমাদের প্রস্তাব না।
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন করে না ভোট ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এবারের না ভোট আগের মতো সব আসনের জন্য। যদি কোনো আসনে একজন প্রার্থী থাকে, তবে সেই আসনে সেই একক প্রার্থীকে না ভোটের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। যদি না ভোট জয়ী হয়, সেক্ষেত্রে পুনরায় নির্বাচন হবে। অর্থাৎ কেউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ পাবে না। পুনরায় নির্বাচনে যদি ফের একক প্রার্থী থাকে তবেই সেই নির্বাচনে আর ভোটের প্রয়োজন পড়বে না।
এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা যতটুকু তাদের সঙ্গে আলোচনায় বুঝেছি যে, তাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি যেটা, সেটা যেভাবে তাদের নেওয়া দরকার তারা যথাযথভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের কিছুটা এখনো কনসার্ন আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে। তবে তারা মনে করেন এবং আমরাও মনে করি যে, দেশে এখন পুলিশের যে ভূমিকা সেই ভূমিকা অপেক্ষাকৃত দুর্বল হয়েছে। এটা আমরা সবাই জানি কেন হয়েছে। এর আগের যে সরকার ছিল তারা তাদের এমনভাবেই ব্যবহার করেছে যে তারা নিজেরাই তাদের আচরণের জন্য লজ্জিত এবং সেজন্যই এই দুর্বলতা। কিন্তু এটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে। নির্বাচন আরও কয়েক মাস দেরি আছে। কাজেই এ সময়ের মধ্যে এটারও কিছু পরিবর্তন হবে।
তিনি আরও বলেন, সেনাবাহিনী এখন আইন শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে সহযোগিতা করছে। নির্বাচন কমিশন থেকে যেটা বলা হলো যে, নির্বাচনের সময়ে যদি প্রয়োজন হয় তারা আরও বেশি সংখ্যক সেনাসদস্য মোতায়নের ব্যাপারে অনুরোধ করবেন। এবং সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাগুলোর জন্য কোস্টগার্ড এবং নেভি, তারা যাতে দায়িত্ব পালন করে সে ব্যাপারে কমিশন চেষ্টা করবে। আমরা জানি যে, নির্বাচন কমিশন কোনো অনুরোধ করলে সরকারকে সেটা রাখতে হয়। কাজেই ওই বিষয়েও আর খুব বেশি দুশ্চিন্তার কোনো কারণ দেখছে না কমিশন। আর আমরা যারা রাজনীতি করি আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো যারা নির্বাচন করে দায়িত্ব তাদেরও আছে। আমাদেরও চেষ্টা থাকতে হবে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো অবনতি না হয়। যাতে আমাদের দল, নেতাকর্মী, সদস্য, শুভানুধ্যায়ী এবং সমর্থকরা তারা যেন শান্তিপূর্ণভাবে উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে ভোটে অংশগ্রহণ করে। এটা আমরা এবং অন্যান্য যত রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, আমি বিশ্বাস করি তাদের সবারই একই মনোভাব থাকবে। ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আমরা দেখি না।
সংসদীয় সীমানা নিয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, কমিশন বলেছে যে, তারা চেষ্টা করেছেন যাতে ভৌগোলিক অখণ্ডতা থাকে, যাতে জেলার অখণ্ডতা থাকে, যেখানে উপজেলার অখণ্ডতা থাকে। এটা তারা মূলনীতি ধরে অগ্রসর হয়েছেন এবং ভোটার সংখ্যার বিষয়টাও তারা বিবেচনায় নিয়েছেন। আপনারা জানেন যে, নির্বাচন কমিশন থেকে যে সার্কুলার দেওয়া হয়েছে সেখানে বলা হয়েছে যে, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা শুধু এ ব্যাপারে অভিযোগ না নিতে পারবে। কোনো রাজনৈতিক দলের এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ বা আপত্তি জানানোর সুযোগ নাই। অতএব আমরা কোনো অভিযোগ বা আপত্তি জানাই নাই তাদের কাছে। এটা আমাদের জানানোর সুযোগ আইনে নাই। তো তারা যেভাবে করার ওটা করছেন এবং এটার যদি কোনো জায়গায় কোনো ব্যত্যয় হয় সেটার জবাব তো তারাই দেবেন। আমাদের দলের নেতাকর্মীরা যারা তাদের আসনের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ আছে, তারা সেটা নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
তিনি বলেন, সম্ভবত কাল পরশু তারা এটার শুনানি শুরু করবেন। এবং শুনানিতে তারা সবাই থাকবেন যারাই অভিযোগ করেছেন এবং তাদের সেই আলোচনার শুনানি শেষে সিদ্ধান্ত হবে।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) নিয়ে নতুন খুব মেজর কোনো সমস্যা আছে বলে আমার কাছে মনে হয় না। আমাদের কাছে যদি নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে কোনো মতামত চায় আমরা আমাদের দলে আলোচনা করে মতামত দেব।
নির্বাচন নিয়ে কোনো কোনো দলের নেতারা সংশয় প্রকাশ করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এ নেতা বলেন, সবাই রাজনীতি করেন, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন, যদি মনে করেন, উনারা যদি বলেন নির্বাচন হবে, তাহলে হবে। আর যদি বলেন হবে না, হবে না। এটাতো ভিন্ন কথা আর কি। কিন্তু আমরা তো যতটুকু জানি যে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারপরে কিসের ভিত্তিতে কোনো ক্ষমতার বলে উনি বললেন?
সিইসির সঙ্গে বৈঠকে ইসি সচিব ও নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন>>
>>> সাধারণ পাসপোর্টধারী প্রবাসীদেরও ভোটের ব্যবস্থা করতে বলল বিএনপি
ইইউডি/আরআইএস