ঢাকা: অতীতে ভুয়া প্রতিবেদন দিয়েছে এমন সংস্থাকে পর্যবেক্ষক হিসেবে আর নিবন্ধন দেবে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একই সঙ্গে যে সকল সংস্থা নিবন্ধন পেলেও ভোট পর্যবেক্ষণ করেনি তাদের নিবন্ধনও নবায়ন হবে না।
ইসি সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইতোমধ্যে নীতিমালা সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন কেবল তা জারি করার পালা। নতুন এ নীতিমালা জারি হলে ২০২৩ সালের নীতিমালাটির আর কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। ফলে আগের সংস্থাগুলোর নিবন্ধনও বাতিল করা হতে পারে।
পূর্বের নীতিমালায় পর্যবেক্ষক হওয়ার ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা সমমান ছিল, নতুন নীতিমালায় পর্যবেক্ষক হতে হলে এইচএসসি বা সমমান পাশ হতে হবে। আর সকল যোগ্যতা আগের মতোই থাকছে।
নিবন্ধন প্রক্রিয়া অংশে নতুন নীতিমালায় ৪.৬ নামে নতুন একটি বিধান যুক্ত করা হয়েছে। আর এতে বলা হয়েছে, ইতোপূর্বে যেসকল পর্যবেক্ষক সংস্থা উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেছে তাদের নিবন্ধন দেওয়া যাবে না।
আবার অন্য একটি জায়গায় বলা হয়েছে, নিবন্ধন পাওয়ার পর একটি জাতীয় ও চারটি স্থানীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ না করলে পরবর্তীতে সেই সংস্থার নিবন্ধন নবায়ন করা হবে না।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, নীতিমালাটি জারি হলে আগে পাওয়া অনেক সংস্থারই নিবন্ধন পাওয়ার সুযোগ কমে যেতে পারে। এমনকি অনেক সংস্থার নিবন্ধন বাতিলও হতে পারে।
এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী নেওয়াজ বাংলানিউজকে বলেন, আইনে যেভাবে হবে, সেভাবেই হবে। তবে আমরা পুনর্মূল্যায়ন করবো। এতে যাদেরটা রাখা যায় তারা থাকবে৷ অন্যরা বাদ পড়বে। এক্ষেত্রে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আগে যদি নতুন করে নিবন্ধন দিতে হয়, আমরা সেটাও দেখবো।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, কিছু কিছু পর্যবেক্ষক তো বাতিল হবেই। যদি কমিশন মনে করে সবগুলো বাতিল হবে।
বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত সংস্থা রয়েছে ৯৬টি। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন করে বিজ্ঞপ্তি দিতে পারে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি। এতে ২০২৩ সালে নিবন্ধন পাওয়া সংস্থা সংস্থাগুলোর পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নিবন্ধন বাতিল হতে পারে।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পর্যবেক্ষক নিবন্ধন প্রথা শুরু করে ইসি। সে সময় ১৩৮টি সংস্থা নিবন্ধন পেয়েছিল। ওই নির্বাচনে দেশি পর্যবেক্ষক ছিল এক লাখ ৫৯ হাজার ১১৩ জন।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ২০১৪ সালে ৩৫টি সংস্থার আট হাজার ৮৭৪ জন পর্যবেক্ষক ভোট দেখেছেন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১১৮টি নিবন্ধিত সংস্থার মধ্যে ৮১টি দেশি সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ জন পর্যবেক্ষক ভোট পর্যবেক্ষণ করেন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৯৬টি নিবন্ধিত সংস্থার মধ্যে ৮০টির মতো সংস্থার ২০ হাজার ২৫৬ জন ভোট দেখেছেন।
নতুন নীতিমালা প্রসঙ্গে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ (জানিপপ) চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন করে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিবন্ধন দিলে ভালো হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম স্নাতক করা উচিত। কারণ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ এতোটা সহজ বিষয়ও নয়। ভোট শেষে একটা প্রতিবেদনও জমা দিতে হয়। কাজেই বিষয়টা আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে।
ইইউডি/এসআইএস