ঢাকা, রবিবার, ৮ ভাদ্র ১৪৩২, ২৪ আগস্ট ২০২৫, ০০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

অর্থনীতি-ব্যবসা

দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হলেই ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:৩২, আগস্ট ২৩, ২০২৫
দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হলেই ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব বক্তব্য রাখছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রধান

ঢাকা: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, অপরিকল্পিত নগরায়ন, নদী দখল ও দূষণ, পরিবেশ দূষণ, পলিথিনের উচ্চ ব্যবহার এবং অসহনীয় যানজটের কারণে রাজধানী ঢাকায় বসবাস ক্রমাগতভাবে অসহণীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে, এ অবস্থা উত্তরণে ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিতকল্পে সারাদেশের টেকসই উন্নয়ন জরুরি।

শনিবার (২৩ আগস্ট) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘রাজধানী ঢাকার টেকসই উন্নয়নে বিকেন্দ্রীকরণ ও পরিবেশ সুরক্ষা’ শীর্ষক ফোকাস গ্রুপ আলোচনা সভা বক্তারা এসব কথা বলেন।

 

ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)-এর চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

মতবিনিময় সভার স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, দেশের জিডিপিতে ঢাকা শহরের অবদান ৪৫ শতাংশ, যদিও ২০২২ সালে বুয়েট পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকার প্রতিদিন যানজটের জন্য ১৪০ কোটি টাকার কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে।

তিনি বলেন, ঢাকার ওপর চাপ হ্রাস ও বিকেন্দ্রীকরণের জন্য প্রশাসনিক এবং বাণিজ্যিক কাজের ঢাকার আশপাশের শহরগুলোকে সেকন্ডোরি শহর তৈরি করতে হবে। ঢাকাকে বাসযোগ্য ও টেকসই মহানগর হিসেবে গড়ে তোলতে সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই বলে মত প্রকাশ করেন ডিসিসিআই সভাপতি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, দেশের জলবায়ু পরিবর্তন ঢাকার বিদ্যমান সমস্যাগুলোকে আরো প্রকট করছে।  

তিনি জানান, সারাদেশের টেকসইয়ের উন্নয়ন করতে হলে, তা সমাজ থেকে আসতে হবে, যেটা আমাদের মধ্যে বেশ অভাব রয়েছে। পলিথিন ব্যবহার কমাতে গত ১ বছরে অনেক ঝুঁকি মোকাবিলা করে সরকার বেশকিছু কাজ করেছি, এখন সরকারি অনেক সংস্থাও এগিয়ে আসছে এবং আশা করছি ভবিষ্যতে ভালো ফল পাওয়া যাবে। পরিবেশ দূষণমুক্ত চাইলে দূষণকারী শিল্প-কারখানা বন্ধ করতে শিল্প-উদ্যোক্তাদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।  

উপদেষ্টা আরও বলেন, ঢাকায় জনসংখ্যা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ রাখা বেশ কষ্টসাধ্য এবং বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করতে ঢাকার আশপাশের শহরগুলোকে স্যাটেলাইট শহর হিসেবে গড়ে তোলা জরুরি। পুরোনো কাঠামো, লোকবল এবং প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ করে, নতুন বাংলাদেশ উপহার দেওয়া বেশ কঠিন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

পরিবেশ উপদেষ্টা জানান, সরকার এয়ার পিউরিফায়ারের ওপর আরোপিত ট্যাক্স অনেকাংশে কমানো হয়েছে, তা ব্যবহারে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ঢাকা শহরের আশপাশে ৪টি নদীসহ সারদেশে ১৩টি নদী দখল ও দূষণ মুক্তকরতে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং এ কাজে দাতা সংস্থাগুলো সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

রাজউকের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, টেকসই ঢাকা তৈরি করতে হলে পুরো বাংলাদেশকেই টেকসই করতে হবে, যা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি, কারণ কর্মসংস্থানের অন্যতম উৎস হিসেবে রাজধানী শহরের কোনো বিকল্প উৎস নেই, এর ওপর চাপ প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং ভবিষ্যতেও এটা কমার সম্ভাবনা প্রতিফলিত হচ্ছে না। ঢাকার সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য সমন্বিত পরিকল্পনার কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি মত প্রকাশ করেন, সে সঙ্গে সব ধরনের উন্নয়নের কার্যক্রম একটি সংস্থার আওতায় নিয়ে আসার প্রস্তাব করেন, যার মাধ্যমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্থপতি ইকবাল হাবিব, বাংলাদেশের নগর জনসংখ্যার ৩২ শতাংশ রাজধানীতে বসবাস করলেও ঢাকার সবুজায়নের অভাব এবং উষতার বৃদ্ধির কারণে এখানকার জীবনযাপন বর্তমানে হুমকির মুখে পড়েছে।  

তিনি বলেন, অতিকেন্দ্রিকতার কারণে ঢাকায় বন্যা, জলাবদ্ধতা বৃদ্ধি, বর্জ্য অব্যবস্থাপনার সংকট, নগর দূষণ এবং জনস্বাস্থ্য সংকট প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বিশেষকরে দেশের নদীগুলোর সুরক্ষার জন্য তিনি নদীকমিশনের সক্ষমতা ও আইনি ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করেন। ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণে সুষম নগরায়ন ও শহরের বিকেন্দ্রীকরণ ও গ্রামীণ জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের ওপর তিনি জোরারোপ করেন। এছাড়া ঢাকার প্রস্তাবিত রিং-রোডগুলোকে যোগযোগের করিডোর বিবেচনা করে প্রাধিকারভিত্তিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা জরুরি বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানে নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)-এর সভাপতি ড. আদিল মোহাম্মদ খান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি)-ভূগোলবিদ ও নগর পরিকল্পনাবিদ দিলবাহার আহমেদ, রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব)- সিনিয়র সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, ডিসিসিআই’র সাবেক সহসভাপতি এম. আবু হোরায়রা, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শামসুল হক, রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম, স্থাপত্য অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. জিয়াউল হক এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম অংশগ্রহণ করেন।

এসএমএকে/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।