প্রশ্ন: যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর পাল্টা শুল্ক ৩৫ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করেছে। অনেকে বলছেন, এটি অন্তর্বর্তী সরকারের কূটনৈতিক সাফল্য, আবার কেউ মনে করছেন এটি একটি আপসের ফল।
এম হুমায়ুন কবির: আপনি বলছেন যে ৩৫ শতাংশ ট্যারিফ কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এটিকে আমরা মোটাদাগে কূটনৈতিক সফলতা হিসেবে দেখতে পারি।
কিন্তু ঠিক কী পরিমাণ শুল্ক দিতে হবে এই বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। কারণ আমরা বিজিএমইএ কিন্তু বলছে, এই ২০ শতাংশ এবং তার পরে ১৫.৫ শতাংশ আগে যেটি আমরা দিতাম, সেটিও যোগ হবে। তাহলে কী দাঁড়াল? ৩৫ শতাংশেই আমরা ঠেকলাম। আমরা সেদিক থেকে পরিষ্কার হতে পারছি না বিষয়টি আসলে কোথায় দাঁড়িয়ে আছে।
বিষয়টি স্পষ্ট নয়। আমাদের বোধ হয় ফাইনাল অ্যাগ্রিমেন্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বিষটি বুঝতে। বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব যেটি বলছেন, সেখানে আসি। যেহেতু বাংলাদেশের এখন প্রতিদ্বন্দ্বী রেডিমেড গার্মেন্টসের ক্ষেত্রে ভিয়েতনাম, ভারত ও শ্রীলঙ্কাকে মনে করি এবং ইন্দোনেশিয়াও খানিকটা হতে পারে।
এ ক্ষেত্রে ভারত ছাড়া অন্যদেরও প্রায় কাছাকাছি শুল্ক ধরা হয়েছে; তো আমরা প্রতিযোগিতামূলকভাবে আগে যেমন অবস্থানে ছিলাম এবং প্রায় তেমন অবস্থায়ই আছি। সে ক্ষেত্রে আমরা আমাদের দক্ষতা ও যেটুকু সক্ষমতা আছে, তা দিয়েই আমরা আমাদের পূর্বাবস্থা ধরে রাখতে পারব। যেহেতু আমরা দেখতে পাচ্ছি সাম্প্রতিক কয়েক মাসে এখানে আমাদের উৎপাদনে গতি বেড়েছে। সেই গতি যদি কন্টিনিউ করে, তাহলে আমার ধারণা, আমরা আগামী দিনে ভালো অবস্থানেই থাকতে পারব। এইটুকু আমরা প্রত্যাশা করতেই পারি।
প্রশ্ন: যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতিতে অন্যান্য প্রতিযোগী দেশ (যেমন—ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা) প্রায় একই শুল্কের আওতায় এসেছে। এটি কি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ, নাকি সুযোগ?
এম হুমায়ুন কবির: এখানে অনেক বিষয় আছে। আমাদের শ্রমিকদের দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা এখনো ভারত বা ভিয়েতনাম থেকে পিছিয়ে আছে। সেটি বাড়াতে হলে ধরেন, শিক্ষা একটি উপাদান, দক্ষতা একটি উপাদান—এগুলো চিন্তার মধ্যে আনতে হবে। সেই সঙ্গে শ্রমিক অধিকারের বিষয়গুলো ভাবতে হবে। নিরাপত্তার বিষয় একটি ছিল আগে, কিন্তু আমার ধারণা, রানা প্লাজার পরে ইস্যুটি মোটাদাগে আমরা অ্যাড্রেস করতে পেরেছি। কিন্তু শ্রমিকের অধিকার, আয়, স্যালারি—এগুলো নিয়ে কিছু প্রশ্ন আছে। তারপর ধরেন, আমরা এখন শ্রমনির্ভর, সেটি অটোমেশনের দিকে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবতে হবে। ইদানীং আমাদের গার্মেন্টস সেক্টরের অনেক কারখানা গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। রিনিউএবল এনার্জি ব্যবহার করে যদি আমাদের উৎপাদন ব্যয় কমাতে পারি, সেখানেও আমাদের সুযোগ আছে। প্রতিযোগিতায় আমরা যদি আরেকটু সামনে থাকতে চাই, তাহলে এগুলোতে মনোযোগ দেওয়া দরকার।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রস্তাবিত বাণিজ্যচুক্তির শর্তাবলির মধ্যে চীন থেকে আমদানি কমানো এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক, কৃষি ও জ্বালানি পণ্য আমদানি বাড়ানোর মতো বিষয় রয়েছে। শর্তগুলো বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও অর্থনৈতিক বিষয়ে কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে?
এম হুমায়ুন কবির: প্রথমে বাণিজ্যিক দিক নিয়েই বলি। নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট বলে চুক্তির বিষয়গুলো আমরা জানতে পারিনি। ট্যারিফ ২০ শতাংশ এবং তার পরে ১৫.৫ শতাংশ আগেরটি যোগ হবে কি না বোঝা যাচ্ছে না। যদি হয়, তাহলে মাত্রাটা বেশ উঁচু, এখানে অনেক রকম চ্যালেঞ্জ আসবে। কারণ যেকোনো কাঁচামাল আমদানি করলে তাতে যদি এত শুল্ক দিতে হয়, তাহলে তো উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাবে। ফলে এখানে আমার বেশ শক্তিশালী সক্ষমতা আনতে হবে।
দেখেন, ব্রিটেনের ক্ষেত্রে যা করেছে, ভিয়েতনামের ক্ষেত্রেও সেটি করেছে। ভিয়েতনামের ক্ষেত্রে বলেছে ট্রানজিটিং গুডস আর ইউকের ক্ষেত্রে বলেছে ইকোনমিকস গুডস। অর্থাৎ চীন থেকে যদি কোনো কাঁচামাল ব্যবহৃত হয়, তাহলে সেখানে ভিয়েতনামের ক্ষেত্রে তারা ৪০ শতাংশের কথা বলেছে, চীনের কথা বলেনি। কিন্তু তারা বলেছে ট্রানজিট কান্ট্রি যদি ভিয়েতনাম হয়ে যায়, তাহলে সেটি অন্য রকম হবে। এখন এখানে বাংলাদেশের জন্য যে চুক্তি আমরা করে এসেছি, সেই চুক্তিতে কী শর্ত বা উপাদান আছে, তা তো আমরা জানি না। কিন্তু এ ধরনের একটা কিছু থাকলেও থাকতে পারে। আর সেটা হলে অবশ্যই আমাদের চিন্তার কারণ হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার এই শুল্কযুদ্ধ শুরু করার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছেই কিন্তু চীনকে একটু বেকায়দায় রাখার জন্য। যেটুকু আন্দাজ করা যায়, ভিয়েতনাম বা ইউকের জন্য যে ধরনের ফর্মুলেশন তারা দিয়েছে, বাংলাদেশের জন্যও কাছাকাছি কিছু একটা থাকার সম্ভাবনা আছে।
এবার যদি আসেন সামরিক, কৃষি, জ্বালানির কথায়। জ্বালানি আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আমদানি করি, করতে পারি। যদি দামে সাশ্রয়ী হয় তুলনামূলকভাবে, তাহলে আমরা তো আমদানি করছিই এবং ভবিষ্যতেও করতে পারি। কৃষিপণ্য আর সামরিক ব্যাপারেও আমাদের আগ্রহের কথা বলেছিলাম আগে। আমার ধারণা, বোধ হয় সামরিক সরঞ্জাম আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আমদানি করতে পারিনি। দামের সঙ্গে যদি মেলে, তাহলে সামরিক সরঞ্জামও আমদানি করা যেতে পারে। কৃষি খাতে একটা জায়গায় কনসার্ন আছে। সেটা হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের কৃষি খাতে ব্যাপকভাবে ঢোকার চেষ্টা করছে। ইউরোপের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যেটা নিয়ে এক ধরনের জটিলতা আছে, সেটা হচ্ছে জিএমও অর্থাৎ জেনেটিক্যালি মডিফায়েড প্রোডাক্ট। এখন এই জেনেটিক্যালি মডিফায়েড প্রোডাক্ট যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিক্রি করতে চায়, তাহলে কিন্তু এখানে গুণগত, স্বাস্থ্যগত বিষয় আছে এবং সেগুলোর ব্যাপারে ইউরোপের আপত্তি আছে। আমার ধারণা, ভারতও সেটাতে আপত্তি দিয়েছে। আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এ ধরনের প্রস্তাব হয়ে যদি থাকে বা আলোচনা হয়ে থাকে, আমি জানি না এতে বাংলাদেশ সম্মত হয়েছে কি না। কিন্তু এটি একটি জটিল জায়গা। এ ছাড়া কৃষিক্ষেত্রে অনেক জিনিস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আমদানি করি। ফার্টিলাইজ, প্রেস্টিসাইড—এগুলো তো বড় বড় কম্পানি থেকে আসে। তো এক্সাক্টলি কী ধরনের প্রোডাক্ট নিয়ে তারা আলাপ-আলোচনা করেছে, সেগুলোর ব্যাপারে এখনো আমার কাছে স্বচ্ছতা নেই। সার্বভৌমত্বের দিক থেকে যদি বলেন—আমি সার্বভৌমত্বে কোনো ধরনের হুমকি বা এ ব্যাপারে নেতিবাচক কোনো প্রভাব দেখার কারণ দেখছি না। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমরা কতটা আমাদের অবস্থান ধরে রাখতে পারব, আমরা নিজেদের সক্ষমতা বাড়িয়ে কতটা প্রতিযোগিতামূলকভাবে আমাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে পারব, সেই জায়গাটাতে আমাদের বেশি মনোযোগ দিতে হবে।
প্রশ্ন: এনডিএ স্বাক্ষরের পর চুক্তির কিছু অংশ ফাঁস হওয়ায় এক সরকারি কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা কি আলোচনায় বাংলাদেশের অবস্থানকে দুর্বল করে দিতে পারে?
এম হুমায়ুন কবির: যে বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার কারণে চাকরি গেছে বলছেন, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অনেকের কাছেই এটি হাতে হাতে ঘুরছে। তো কাজেই আমার মনে হয়, এই বিষয়টি নিয়ে একটু বেশিই তৎপর ছিলাম। অন্য দু-একটি বন্ধু দেশের কথা আমি জানি। এনডিএ স্বাক্ষর করার পরে তাদের সরকার নিজ নিজ দেশের ওই সব ক্ষেত্রে যাঁরা বিশেষজ্ঞ আছেন, তাঁদের সঙ্গে তারা আলোচনা করেছে এবং এনডিএ তো সেটিও বাধা দেয়নি। বিষয়টি নিয়ে যে স্বচ্ছতা এবং দায়বদ্ধতার একটা জায়গা আছে, এই জায়গায় আমার মনে হয় না যে আমরা স্পষ্টভাবে ডিল করেছি। বিষয়টি আমরা এমনভাবে উপস্থাপন করেছি যে স্বচ্ছতার জায়গাটা একটু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রশ্ন: যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক শুল্কনীতি পাকিস্তানের জন্য সুবিধা, ভারতের জন্য বাড়তি শুল্ক—বিষয়গুলো বাংলাদেশের জন্য কী বার্তা বহন করছে?
এম হুমায়ুন কবির: বাংলাদেশের সঙ্গে আর ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের মাত্রা এক না। ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে চীনের উপস্থিত বা চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বা ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বিতা। পাকিস্তানও এখানে জড়ায়, কিন্তু ভারতের এটি বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট। ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত এটি একটি ফেজ আর পাকিস্তান, বাংলাদেশ আলাদা ফ্রেম। তো সেই ফ্রেমের আলোকেই চীনের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রেক্ষাপটে তারা ভারতকে তাদের মিত্র মনে করে বা মিত্র হিসেবে পেতে আগ্রহী। এখন শুল্কের বিষয়ে এসে যেটি দাঁড়িয়েছে, সেটি হচ্ছে এই মিত্রতাটা কিন্তু শুরু হয়েছে ২০০৫ সাল থেকে। তারা গত ২০ বছর ইতিবাচকভাবে পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কটা উন্নয়নের দিকে নিয়ে গেছে বিভিন্ন স্তরে। কিন্তু এখন যেটা দাঁড়িয়েছে, এই শুল্কের কারণে ভারত নিশ্চিতভাবেই এখন আনহ্যাপি। ভারতের ইকোনমিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ডেড ইকোনমি বলেছেন এবং ৫০ শতাংশ শুল্ক দেওয়ার ফলে ভারতের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়েছে। গত বছর ভারত ৮৬ বিলিয়ন ডলার ইউএস ডলার রপ্তানি করেছে, শুল্কযুদ্ধে এটা অর্ধেকে নেমে গেছে বা যাবে। এখানে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে একটা টানাপড়েন তৈরি হবে। এখন পাল্টা দিকে যদি দেখি, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী যাচ্ছেন সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন সম্মেলনে অংশ নিতে বেইজিংয়ে। এখানে আরেকটি কথা বলে রাখি, ভারতের সঙ্গে এই টানাপড়েনের কারণটি হচ্ছে রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে এবং সেই তেল তারা প্রসেস করে ইউরোপে বিক্রি করে। এই তেল কেনার কারণে রাশিয়ার যুদ্ধ চালানোর যে সক্ষমতা, সেটি চালু রাখতে পারছে, মানে এ ক্ষেত্রে ভারত সহায়তা করছে। এই যুক্তির ভিত্তিতে ভারতের ওপর এই শুল্কটা জারি করা হয়েছে। তো এখন ভারত যদি চীন বা রাশিয়ার দিকে ঝোঁকে, তাহলে কিন্তু এখানে ভূ-রাজনৈতিক ব্যালান্স একদিকে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়। এ ক্ষেত্রে আপনি আরো লক্ষ করবেন ব্রিকস সম্মেলন। গত ব্রিকস সম্মেলন যেটি ব্রাজিলে হয়ে গেল, সেখানেও কিন্তু একটি প্রস্তাব নিতে চেয়েছিল যে আমরা বাণিজ্যিক পেমেন্ট বা লেনদেনের ক্ষেত্রে ডলারকে আর রাখব না। সেখানে কিন্তু ভারত সেটিকে আটকে দিয়ে ডলারের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল এবং সেখানে ভারতকে অনেক কটু কথাও শুনতে হয়। এখন ভারত যদি চীন ও রাশিয়ার দিকে একটু ঝুঁকে গিয়ে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে, তাহলে নিশ্চিতভাবেই আমার ধারণা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন বাড়বে। তবে এখানে একই সঙ্গে এটিও বলে রাখা দরকার যে ভারতের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক গত ২০ বছরে বহুমাত্রিকভাবে তৈরি হয়েছে এবং উভয় দেশের মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণভাবে বিভিন্ন শক্তিশালী গ্রুপ বা সমর্থক গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। তারা কিন্তু শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টেনশন নিয়ে কাজ করছে সক্রিয়ভাবে। কাজেই ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্কের টানাপড়েনটা এখনো শেষ অধ্যায় আমরা দেখেছি বলে মনে করি না। এটি নিয়ে আরো টেনশন আছে, কিন্তু সেটি কোথায় গিয়ে শেষ হবে, তা দেখতে আমাদের আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে।
প্রশ্ন: ট্রাম্প প্রশাসনের মায়ানমার নীতিতে তো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার মতো পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং এটি মায়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনগুলোকে দুর্বল করবে কি না বা চীনের প্রভাবটি কী মাত্রায় পরিবর্তন হবে ট্রাম্প প্রশাসনের ভূমিকার কারণে?
এম হুমায়ুন কবির: এটি আপনি ঠিকই বলেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিককালে মায়ানমারের ওপর বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে, যেটি আপনি বলছিলেন, তারা কয়েকজনের ওপর থেকে স্যাংশন তুলে নিয়েছে। আরেকটি জিনিস হয়েছে এই ঘটনার পর, মায়ানমারের দিক থেকে তারা বেশ আগ্রহ নিয়ে ওয়াশিংটনে লবিইস্ট নিয়োগ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য। আমরা একটি বড় ধরনের নতুন উপাদান দেখতে পাচ্ছি এবং যে কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ট্রাম্প প্রশাসন এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। সেটি হচ্ছে যে রেয়ার আর্থ, ইলেকট্রনিক জিনিসগুলো তৈরির অন্যতম প্রধান উপাদান। মায়ানমারের এই রেয়ার আর্থের দিকে তাদের আকর্ষণ আছে। কিন্তু আবার খবর পাওয়া যাচ্ছে যে রেয়ার আর্থ মিনারেলগুলোর প্রায় সব কটিতেই চীনের উপস্থিতি। এর অর্থ আমরা মায়ানমারে এক ধরনের চীন-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটি আভাস পাচ্ছি।
প্রশ্ন: পার্বত্য অঞ্চল, ভারত ও মায়ানমারের একটি অঞ্চল নিয়ে বৈশ্বিক কোনো কোনো শক্তির পরিকল্পনা আছে বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তো এ ব্যাপারে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রীরও একপ্রকার বক্তব্য ছিল। আপনি কী মনে করেন?
এম হুমায়ুন কবির: পরিস্থিতি একটু ঘোলাটেই আছে, কিন্তু আমার কাছে মনে হয় না তেমন কোনো পরিকল্পনা আছে। কারণ হচ্ছে, এই অঞ্চলে ভৌগোলিক সীমারেখা বা বিভিন্ন রাষ্ট্রের যে অখণ্ডতা আছে, এটি ভাঙার জন্য যে কেউ উদ্যোগী আছে, এটি আমরা নিশ্চিত নই আর কি। অর্থাৎ আমি ব্যক্তিগতভাবে নিশ্চিত নই। চীন নিশ্চিতভাবে এই অঞ্চলের কোনো রাষ্ট্রের ভৌগোলিক অখণ্ডতা নষ্ট হোক, এটি চায় না এবং চীন এই অঞ্চলের বড় শক্তি। ভারতের দিক থেকে যদি আমি আসি, তাহলে ভারতও আঞ্চলিক অখণ্ডতা বা ভৌগোলিক অখণ্ডতা ক্ষতিগ্রস্ত হোক, এটি চায় না। তাহলে আসিয়ানে যদি আমি আসি, আমার ধারণা, তারাও এটি চায় না। বাংলাদেশের দিক থেকেও আমি মনে করি, কোনো দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা ক্ষতিগ্রস্ত হোক, এটি আমরা চাই না। তাহলে যদি আমরা না চাই, এই চার শক্তি যারা আমরা এই অঞ্চলে আছি, আমরা যদি না চাই, তাহলে বাইরের কেউ এসে এখানে ক্ষতিগ্রস্ত করার যথেষ্ট শক্তিশালী গ্রাউন্ড বা প্রেক্ষাপট পাবে কিভাবে? কাজেই যুক্তির বিচারে এই বক্তব্যকে সমর্থন করার মতো কোনো তাৎক্ষণিক উপাদান বা তথ্য-উপাত্ত পাচ্ছি না। তবে একটি আলোচনা আছে, এ রকম আলাপ আছে সেটি—আমরা আগের সরকারেও শুনেছি এ রকম আলাপ। প্রতিটি রাষ্ট্রের ভেতরে অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে, মায়ানমারে আছে, ভারতে আছে, বাংলাদেশে আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে সমস্যা আছে। কিন্তু এই সমস্যাগুলো আন্তঃরাষ্ট্রীয় ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে পরিবর্তন করে দেবে, তেমন কোনো উপাদান বা আলামত আমার চোখে অন্তত পড়ছে না।
প্রশ্ন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের সময় দেওয়ার জন্য।
এম হুমায়ুন কবির: আপনাদেরও অসংখ্য ধন্যবাদ।
সৌজন্য: কালের কণ্ঠ