ঢাকা, রবিবার, ২৬ শ্রাবণ ১৪৩২, ১০ আগস্ট ২০২৫, ১৫ সফর ১৪৪৭

অর্থনীতি-ব্যবসা

বিভিন্ন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ঋণ পুনর্গঠনে কাজ চলছে: গভর্নর

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৫৭, আগস্ট ১০, ২০২৫
বিভিন্ন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ঋণ পুনর্গঠনে কাজ চলছে: গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। ফাইল ফটো

করোনা মহামারি, অর্থনৈতিক সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ঋণ পুনর্গঠনে কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।  

তিনি বলেন, এসব কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাব নিয়ে কাজ করছে। এ পর্যন্ত ১২০০-এর বেশি আবেদন এসেছে। এর মধ্যে ২৫০টি সমাধান করা হয়েছে, বাকিগুলো প্রক্রিয়াধীন। প্রতিটি আবেদন আলাদাভাবে দেখা হচ্ছে—বাংলাদেশ ব্যাংক, ঋণ প্রদানকারী বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং আবেদনকারী—এই তিন পক্ষের সমন্বয়ে সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে। কোনো সাধারণীকরণ করা হচ্ছে না, যাতে কেউ সুযোগ নিয়ে টাকা তুলে নিতে না পারে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অবস্থা, সম্ভাব্য সমাধান ও অতীত রেকর্ড যাচাই করেই সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

রোববার (১০ আগস্ট) রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ৩৬৫ দিন’ শীর্ষক সংলাপে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গভর্নর এ কথা বলেন।

ড. মনসুর বলেন, খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে মেয়াদ ছয় মাস থেকে কমিয়ে তিন মাস করা হয়েছে। প্রথমে ব্যাংক বা উদ্যোক্তারা বিষয়টি মেনে নিতে না পারলেও এখন তারা গ্রহণ করেছে। প্রভিশন সংরক্ষণ না করে কোনো ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে না—প্রথমবারের মতো এই নীতি কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ বা ন্যূনতম মূলধন রিকোয়ারমেন্ট (১০ শতাংশ) পূরণ করতে না পারা ব্যাংকগুলো লভ্যাংশ দিতে পারেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক অধ্যাদেশ ১৯৭২-এ মৌলিক পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে গভর্নর বলেন, শক্তিশালী আর্থিক খাতের জন্য শক্ত নেতৃত্ব ও আইনগত ভিত্তি দুটিই জরুরি। দুর্বল নেতৃত্ব দিয়ে শক্ত প্রতিষ্ঠান চালানো যায় না, আর শক্ত নেতৃত্ব দিয়েও কিছু হবে না যদি আইনগত ক্ষমতা না থাকে।

তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও আমলাতান্ত্রিক বাধা দূর করে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়বদ্ধতা ও স্বশাসন বাড়াতে হবে। অতীতে যে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে, তা ভবিষ্যতে ঠেকানোর ব্যবস্থা রাখতে হবে।

তিনি জানান, রিপোজিট ইন্স্যুরেন্স আইনে পরিবর্তন আনা হচ্ছে—আগে আমানতের বিমা সীমা ছিল ১ লাখ টাকা, এখন তা বাড়িয়ে ২ লাখ করা হচ্ছে। এ ছাড়া ব্যাংক রেজুলেশন নীতি করা হচ্ছে, যাতে কোনো ব্যাংক তারল্য সংকটে পড়লে বা সুশাসনে মৌলিক সমস্যায় পড়লে বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারে। সরকারি-বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই একীভূত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিশ্চিতের প্রস্তাব করা হয়েছে। খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য উচ্চ আদালতে রিট করে ঋণ আদায় প্রক্রিয়া আটকে দেওয়ার প্রবণতা রোধে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে এবং এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনা রয়েছে।

সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।  

জেডএ/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।