চট্টগ্রাম: সনাতন ধর্মের প্রাণপুরুষ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন শুভ জন্মাষ্টমীতে আবারও এসেছে সম্প্রীতির ডাক। জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির আয়োজনে শনিবার (১৬ আগস্ট) সকালে নগরের আন্দরকিল্লা মোড়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য শোভযাত্রা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক বলেন, ‘আজ থেকে যে কয়দিন জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠান উদযাপিত হবে, আমি একান্তভাবে কামনা করি চট্টগ্রামের সব সম্প্রদায়ের মানুষ সম্মিলিতভাবে সম্পৃক্ত থেকে আমাদের আগামীর অগ্রযাত্রাকে শক্তি এবং সাহস যোগাবে। আশা করছি আগামী দিনের যে নির্বাচিত সরকার আসবে তারা আপনাদেরই সরকার হবে।
বিশেষ অতিথি বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই- এই কথাটা যেন আমরা ধারণ করি, লালন করি এবং নিজের জীবনে সেটা আমরা যেন পালন করি। এই দেশ হিন্দুর, এই দেশ খ্রিস্টানের, এই দেশ বৌদ্ধের, এই দেশ মুসলমানের। আমার যেটুকু অংশ আমার প্রতিটি ভাইয়ের অংশ ঠিক ততটুকু। এই কথাটা যদি আমরা স্মরণ রাখি, তাহলে যে সোনার বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখি সেই বাংলাদেশকে অর্জন করতে পারবো’।
শোভাযাত্রা উদ্বোধক ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি সবাইকে জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানিয়ে ক্লিন, গ্রীন, হেলদি ও সেইফ সিটি গঠনের আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আগামীর চট্টগ্রাম শহর হবে সকল ধর্ম, বর্ণ ও শ্রেণি-পেশার মানুষের নিরাপদ শহর। আশীর্বাদক ছিলেন পটিয়া পাঁচুরিয়া তপোবন আশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ রবীশ্বরানন্দ পুরী মহারাজ। বিশেষ অতিথি ছিলেন হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি দীপক কুমার পালিত।
অনুষ্ঠান শেষে বেলুন উড়িয়ে শোভাযাত্রা উদ্বোধন করেন অতিথিরা। এরপর বিভিন্ন যানবাহনে নানা রঙে ও সাজে সজ্জিত ভক্তদের অংশগ্রহণে শুরু হয় জন্মাষ্টমীর র্যালি। ঢাক-ঢোলসহ নানা বাদ্যযন্ত্রের তালে নেচে গেয়ে ভক্তরা শোভাযাত্রায় অংশ নেন। শোভাযাত্রাটি আন্দরকিল্লা মোড় থেকে শুরু হয়ে লালদীঘি মোড়, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন সড়ক ঘুরে জে এম সেন হল প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়।
জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক লায়ন আর.কে দাশ রুপুর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন পরিষদের কার্যকরি সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব দে পার্থ। মহাশোভাযাত্রা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাজীব ধর তমাল ও শিমুল মুহুরীর যৌথ সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম মহানগর জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন শংকর সেনগুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক ডা. রাজীব বিশ্বাস, দক্ষিণ জেলা জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাবুল ঘোষ বাবুন, সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল বরণ বিশ্বাস, পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি চন্দন দাশ, বিদ্যালাল শীল, অধ্যাপক অর্পণ কান্তি ব্যানার্জী, অর্থ সম্পাদক রতন আচার্য্য, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজন দাশ, উপ-অর্থ সম্পাদক সুমন ঘোষ বাদশা, সাংস্কৃতিক সম্পাদক কানুরাম দে, উপ-দপ্তর সম্পাদক বাবলু কুমার নাথ প্রমুখ।
দুপুর ২টায় জেএম সেন হলে অনুষ্ঠিত হয় যুবসম্মেলন। বিকাল ৩টায় মাতৃসম্মেলন শেষে বিকাল ৫টায় ধর্মসম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এছাড়া রাত ৮টায় মহানামযজ্ঞের শুভ অধিবাস শেষে ১৭ ও ১৮ আগস্ট চলবে ষোড়শপ্রহরব্যাপী মহানাম সংকীর্ত্তন। প্রতিদিন দুপুর ও রাতে ভক্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে মহাপ্রসাদ।
শ্রীকৃষ্ণ-ভালোবাসা আর ন্যায়ের চিরন্তন সুরধ্বনি। গোকুলের অঙ্গনে তাঁর জন্ম যেন এক আলোকরেখা, অন্ধকার যুগের বুক চিরে মানবতাকে দেয় নতুন প্রাণ। শৈশবের স্মৃতি, বাঁশির মধুর সুর-সবই ছিল ভক্তির অপরূপ মহাকাব্য। তিনি মহাভারতের রণাঙ্গনে দাঁড়িয়ে অর্জুনের কাছে ঘোষণা করেন-‘যখনই অধর্ম বাড়ে, তখনই আমি অবতীর্ণ হই’।
শ্রীকৃষ্ণ একইসঙ্গে কোমল প্রেমের মাধুর্য আর দৃপ্ত ন্যায়ের বজ্রধ্বনি। তিনি মানব হৃদয়ে প্রেমের আলো জ্বালান, ভক্তিকে করেন জীবনের দিশারি, আর কর্মক্ষেত্রে শেখান সত্য ও ন্যায়ের পথ। শ্রীকৃষ্ণ যেন এক অনন্ত বাঁশির সুর-যা যুগে যুগে মানুষের অন্তরে বেজে ওঠে প্রেম, ভক্তি আর মুক্তির আহ্বান নিয়ে।
এসি/টিসি