ঢাকা, বুধবার, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৬ আগস্ট ২০২৫, ১১ সফর ১৪৪৭

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

এমন বৃষ্টির দিনে চট্টগ্রামে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:১০, আগস্ট ৬, ২০২৫
এমন বৃষ্টির দিনে চট্টগ্রামে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম: ১৯০৭ সালের ১৭ জুন, সোমবার। বৃষ্টি ঝরছিল অঝোর ধারায়।

সেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজারও মানুষের ঢল নেমেছিল বটতলী স্টেশনে। উদ্দেশ্য, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বরণ করে নেওয়া।
ভোরের ট্রেনে তিনি চট্টগ্রাম শহরে এলেন, সঙ্গে ছিলেন ভাইপো সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বন্ধু কেদারনাথ দাশগুপ্ত।

আহমদ রফিক এর ‘রবীন্দ্রনাথ এই বাংলায়’ এবং নিতাই সেনের লেখা ‘চট্টগ্রামে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ও অন্নদাশংকর’ গ্রন্থে পাওয়া যায় এই বিবরণ।

বরিশালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভা ও ব্রাহ্ম সমাজের এক নেতার পুত্রের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে সেদিন ভোর ৬টার দিকে ট্রেন থেকে নামার পর আগে থেকেই প্রস্তুত করে রাখা ঘোড়ার গাড়িতে তোলা হয় কবিগুরু ও তাঁর সফরসঙ্গীদের। ফুল দিয়ে সাজানো ছিল গাড়িটা। চারপাশ ঘিরে ছিলেন কবি-সাহিত্যিক, ভক্ত-অনুরাগীরা। কাজেম আলী মাস্টার ও ত্রিপুরাচরণ চৌধুরীর উদ্যোগে রেলওয়ে স্টেশনও ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছিল। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় আন্দরকিল্লায় কমলাকান্ত সেনের দোতলা বাড়িতে।

জেমিসন রেডক্রিসেন্ট হাসপাতালের পাশের সেই বাড়িটির অস্তিত্ব এখন আর নেই। কমলাকান্ত’র ছেলে যামিনীকান্ত সেন ছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের আইনজীবী। ১৯০৬ সালে শিক্ষকতা করেছেন শান্তিনিকেতনে। তিনি চট্টগ্রাম হিতসাধনী সভার প্রতিষ্ঠাতা। কবিগুরুকে চট্টগ্রামে আসার  আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন যামিনীকান্ত, গঠন করেছিলেন অভ্যর্থনা কমিটি।

বিবরণ মতে, দোতলা বাড়ির সামনে কবিকে দেখতে সেদিন ভিড় করেছিলেন শত শত মানুষ। কবি হাত নেড়ে তাদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেন। ওইদিন সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যাপক রজনীরঞ্জন সেনের বাড়িতে যান কবি। বাড়িটা ছিল পার্সিভিল হিলের ‘দ্য প্যারেড’। সেটির অস্তিত্বও এখন নেই। সেই বাড়িতে কবি-সাহিত্যিকদের সাথে চট্টগ্রামে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ গঠন বিষয়ে বৈঠকে যোগ দেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রাতে কবিগুরুর সম্মানে একজন বিচারক খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু বৈঠক থাকায় কবি না গিয়ে ভাইপো সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিমন্ত্রণে পাঠান। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কবি নবীনচন্দ্র সেন, মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, ব্রজকুমার সেন, আবদুর রহমান দোভাষ, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ, মাহিমচন্দ্র গুহ, যাত্রা মোহন সেন, রামচন্দ্র বড়ুয়া, কাজেম আলীসহ বিশিষ্টজনরা। বৈঠক শেষে রাতে আবারও কমলাকান্ত সেনের বাড়িতে গিয়ে রাত্রিযাপন করেন কবি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চট্টগ্রাম সফরের দ্বিতীয় দিন ১৮ জুন। এদিন সকালে তিনি শহর ঘুরে দেখেন। কর্ণফুলী নদীর তীরে গিয়ে সময় কাটান। সন্ধ্যায় সদরঘাটে কমলবাবুর থিয়েটারে (অধুনালুপ্ত লায়ন সিনেমা হল) তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন কবি, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিকর্মী, স্বদেশী আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা।

অনুষ্ঠানে কবি বক্তব্য দেন। তিনি সবাইকে স্বদেশের জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। শেষে তাঁকে গান গাইতে অনুরোধ করেন ব্রজকুমার সেনগুপ্ত। জানা যায়, আবদার রক্ষা করে কবি গেয়েছিলেন গান। এরপর রাত সাড়ে ৮টার ট্রেনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চট্টগ্রাম ছেড়ে যান।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শান্তা গুহ বলেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রিয় ঋতু ছিল বর্ষা। এই বর্ষার এক ছন্দমুখর দিনে তিনি এসেছিলেন চট্টগ্রামে। ইতিহাস সূত্রেই আমরা এ তথ্য পাই। তাঁর পদধূলিধন্য স্মৃতিময় স্থানগুলো সংরক্ষণ করা হলে নতুন প্রজন্ম জানবে ভুলে যাওয়া ইতিহাস।

এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।