ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১০ সফর ১৪৪৭

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

জুলাই শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না: মেয়র শাহাদাত 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:২৮, আগস্ট ৫, ২০২৫
জুলাই শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না: মেয়র শাহাদাত  ...

চট্টগ্রাম: জুলাই আন্দোলনের শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না। তাঁদের আত্মত্যাগের আদর্শই আমাদের পথ দেখাবে গণতন্ত্রের পথে ফিরে যাওয়ার লড়াইয়ে।

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকালে দামপাড়ায় গরিবুল্লাহ শাহ (র.) মাজারে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস-২০২৫ উপলক্ষে শহীদ মোহাম্মদ আলমের কবর জেয়ারত শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন মেয়র।

তিনি বলেন, আমরা অনেকবার অভ্যুত্থান দিবস পালন করেছি।

আর নয়। এবার আমাদের স্বপ্ন—একটি দুর্নীতিমুক্ত, মৌলিক অধিকার ও গণতন্ত্রসম্পন্ন বাংলাদেশ—বাস্তবায়ন করতেই হবে।

আজকের দিন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, গণতন্ত্রের জন্য জীবন দেওয়া শহীদদের ঋণ শোধে আমরা কতটা ব্যর্থ। সেই ব্যর্থতা কাটাতে হলে বিভাজন ভুলে জাতীয় ঐক্যের পতাকাতলে সবাইকে সমবেত হতে হবে।

মেয়র বলেন, ৫ আগস্ট আমাদের জন্য আনন্দেরও, বেদনারও। আনন্দ এই জন্য যে, আজকের প্রজন্মও শহীদদের রক্তের ঋণ মনে রেখেছে। কিন্তু বেদনার এই যে, শহীদদের পরিবার আজও কান্নায় ভাসে। তাদের সন্তান, ভাই, আত্মীয় হারানোর শোক আজও মুছে যায়নি। এই শোক আমাদের আনন্দকে ম্লান করে দেয়।

তিনি বলেন, আমরা শহীদদের স্মৃতি বুকে ধারণ করে বলতে চাই—বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত, মৌলিক অধিকারসমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যই আমাদের একমাত্র শক্তি। বিভাজন আর অনৈক্যের রাজনীতি দিয়ে শহীদদের আত্মত্যাগের মর্যাদা রাখা যাবে না।

চসিক মেয়র বলেন, গত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো নির্যাতনের শিকার হয়েছে, আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছে। আজকের দিনে আমরা যদি তাদের আত্মত্যাগের মূল্য দিতে চাই, তাহলে দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যের পথে আসতে হবে। কারণ, ঐক্য ছাড়া আমরা যে বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখছি, শহীদরা যে বাংলাদেশ চেয়েছিল, তা সম্ভব নয়।

আমাদের ভোটাধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, আইনের শাসন, বাক-স্বাধীনতা এবং মৌলিক অধিকার—খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য—এই অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে হবে। এটাই হবে শহীদদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা। অনৈক্য নয়, বরং ঐক্যের শক্তি দিয়ে আমরা বিজয় ধরে রাখতে চাই, যেন আর কোনো অভ্যুত্থান দিবস পালন করতে না হয়।

আমরা ৯০'র স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে ছিলাম, ৭১'এ আমাদের পূর্বসূরিরা মুক্তিযুদ্ধে লড়েছে, ২০২৪'এ আমাদের সন্তানরা শহীদ হয়েছে। বারবার কেন আমাদের গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করতে হবে? আমরা চাই, অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে একটি সুষম, সাম্যের জাতি গড়তে, যেখানে সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে।

গণতন্ত্র ধ্বংস করে কেউ টিকতে পারে না। তাই আমাদের গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে ভোটের মাধ্যমে জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে আনতেই হবে। আমার অধিকার আমার ভোট। ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আমি যেন কেন্দ্রে গিয়ে আমার ভোট দিতে পারি—এই অধিকার রক্ষা করতেই আমাদের লড়াই। ঐক্যের ভিত্তিতেই শহীদদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।

কবর জেয়ারত শেষে শহীদ মোহাম্মদ আলমের পরিবারের সাথে কথা বলেন মেয়র এবং সব ধরনের সহায়তা করবেন বলে জানান। আন্দেলনে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মুনাজাত পরিচালনা করেন মেয়র।  এরপর টাইগারপাসস্থ চসিক কার্যালয়ে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে আয়োজিত মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভায় অংশ নেন মেয়র।  

এ সময় উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো. আশরাফুল আমিন,  প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা সরোয়ার কামাল, প্রধান প্রকৌশলী আনিসুর রহমান, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা ড. কিসিঞ্জার চাকমা, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরী, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. ইমাম হোসেন রানা, আইন কর্মকর্তা মহিউদ্দিন মুরাদ, মেয়রের একান্ত সহকারী মারুফুল হক চৌধুরী  (মারুফ), সমাজকল্যাণ ও সংস্কৃতি কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ প্রমুখ।

এআর/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।