দাঁত ও মুখের স্বাস্থ্য পরিচর্যা কেবল সৌন্দর্যের ব্যাপার নয়—এটি আমাদের সামগ্রিক শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন মানুষ কোনো না কোনো ধরনের মুখগহ্বর বা দাঁতের সমস্যায় ভুগছেন, যা বৈশ্বিক জনসংখ্যার প্রায় ৪৫ শতাংশ।
এ বাস্তবতায়, মানুষের মাঝে দাঁত ও মুখের যত্নের বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কিছু ব্র্যান্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো পেপসোডেন্ট, যা দীর্ঘদিন ধরে শুধু একটি টুথপেস্ট ব্র্যান্ড হিসেবেই নয়, বরং দাঁত ও মুখের স্বাস্থ্যসচেতনতার অন্যতম রূপকার হিসেবে কাজ করছে।
পেপসোডেন্টের যাত্রা শুরু প্রায় এক শতাব্দী আগে একটি বিশেষ ফর্মুলা দিয়ে, যার মূল উপাদান ছিল পেপসিন। এটি দাঁতে জমে থাকা খাদ্যকণা দূর করে দাঁত ও মাড়িকে সতেজ রাখার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশে পেপসোডেন্টের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯১ সালে, যখন বাজারে আনা হয় জার্মিচেক টুথপেস্ট। এরপর ১৯৯৮ সালে টুথপাউডারের প্রচলিত কালো ছাই-ভিত্তিক অভ্যাস ভেঙে পরিচ্ছন্ন সাদা পাউডারের ধারণা প্রতিষ্ঠা করে ব্র্যান্ডটি।
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দাঁতের যত্নে আধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত করেছে পেপসোডেন্ট। ২০১৮ সালে তারা নিয়ে আসে সিপিসি ক্লে টেকনোলজি, যা ১২ ঘণ্টা জীবাণু থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করে। ২০২৪ সালে স্থানীয় ভোক্তার স্বাদ বিবেচনায় আরও উন্নত ফর্মুলা চালু করে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য কার্যকর ও সহজতর।
এছাড়া দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধে ফ্লোরাইড প্রযুক্তির কার্যকারিতা বৈজ্ঞানিকভাবে দীর্ঘদিন ধরে প্রমাণিত—যা পেপসোডেন্টের পণ্যে সফলভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। সম্প্রতি বাজারজাত হওয়া পেপসোডেন্ট অ্যাডভান্স সল্ট টুথপেস্ট এ ধারাবাহিক উদ্ভাবনেরই একটি নতুন সংযোজন।
২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটি (বিডিএস)-এর সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে দেশজুড়ে পেপসোডেন্ট চালু করেছে নানা কার্যক্রম। এর মধ্যে রয়েছে ফ্রি ডেন্টাল ক্যাম্প, স্কুল ব্রাশিং প্রোগ্রাম এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি উদ্যোগ। এসব কর্মসূচির আওতায় গত এক দশকে এক কোটিরও বেশি শিশু দাঁতের যত্ন বিষয়ে শিক্ষা ও সচেতনতা অর্জন করেছে।
ডব্লিউএইচও’র তথ্য অনুযায়ী, প্রতি দুই জনে একজন মানুষ মুখ বা দাঁতের রোগে ভুগছেন এবং একবিংশ শতাব্দীতেও দাঁতের ক্ষয় শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে অন্যতম দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা। এ বাস্তবতায় পেপসোডেন্টের কার্যক্রম বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত পরিচালিত ‘সুপার ডেন্টিস্ট’ প্রোগ্রাম এবং চলমান ‘ডেন্টিবাস’ মোবাইল ডেন্টাল চেম্বার শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে দাঁতের চেকআপ ও ব্রাশিং শেখার সুযোগ দিয়েছে। পাশাপাশি ‘লিটল ব্রাশ, বিগ ব্রাশ’ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে শিশু ও অভিভাবকদের মধ্যে ২১ দিনের নিয়মিত ব্রাশিংয়ের অভ্যাস গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে।
বিশ্ব ওরাল হেলথ ডে উপলক্ষে প্রতি বছর পেপসোডেন্ট আয়োজন করছে বিনামূল্যের স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প। ২০২৩ সালে তারা দেশব্যাপী প্রায় ৪০০ স্কুলে ক্যাম্প পরিচালনা করে উপকৃত করেছে প্রায় ২০ লাখ মানুষ। একই বছরে ২০০০- এর বেশি দন্তচিকিৎসককে নিয়ে আয়োজন করে একটি আন্তর্জাতিক সাইন্টিফিক সেশন।
২০২৪ সালে এ উদ্যোগের পরিসর আরও বিস্তৃত হয়—৫৫০টিরও বেশি ক্যাম্প আয়োজনের মাধ্যমে দাঁত ও মুখের স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে যায় আরও বিস্তৃত জনগোষ্ঠীর কাছে। এখন পর্যন্ত এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ সরাসরি উপকৃত হয়েছেন।
শিশু-কিশোরদের মাঝে দাঁত ও মুখের যত্ন বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে পেপসোডেন্টের ‘ডিশুম ডিশুম’ ক্যাম্পেইন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এটি জীবাণু প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি, ফেসবুক, ইউটিউব ও ইনস্টাগ্রামের মতো ডিজিটাল মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মাঝে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস ও সচেতনতা তৈরিতেও কার্যকর ভূমিকা রাখছে ব্র্যান্ডটি।
উদ্ভাবনী প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরির ধারাবাহিক প্রচেষ্টা এবং স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোর সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্ব—সব মিলিয়ে পেপসোডেন্ট আজ কেবল একটি টুথপেস্ট নয়, বরং দাঁত ও মুখের স্বাস্থ্যসুরক্ষায় একটি জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের অংশীদার।
বাংলাদেশে তিন দশকের এ অগ্রযাত্রা প্রমাণ করে, দাঁতের যত্নে সচেতনতা তৈরি ও ধারাবাহিক পরিবর্তনে ব্র্যান্ডটির অবদান অনস্বীকার্য। ভবিষ্যতেও আধুনিক প্রযুক্তি ও সামাজিক উদ্যোগের সমন্বয়ে মুখের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি এবং মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে থাকতে পেপসোডেন্ট প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এমআইএইচ/আরআইএস