ঢাকা, সোমবার, ২০ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৪ আগস্ট ২০২৫, ০৯ সফর ১৪৪৭

জলবায়ু ও পরিবেশ

উপকূলে ‘রেইন ফর লাইফ’ প্রকল্পের যাত্রা শুরু

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:০১, আগস্ট ৩, ২০২৫
উপকূলে ‘রেইন ফর লাইফ’ প্রকল্পের যাত্রা শুরু

জলবায়ু পরিবর্তনে দেশের উপকূলীয় এলাকায় দিনকে দিন বাড়ছে লবণাক্ততা, তীব্র হচ্ছে সুপেয় পানির সংকট। লবণাক্ততা, খরা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে প্রতিদিনই টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন সাতক্ষীরার আশাশুনি, বাগেরহাটের মংলা ও বরগুনার পাথরঘাটার মানুষ।

নিরাপদ পানি ও জলবায়ু সহনশীলতা গড়ে তুলতে ডেনমার্ক সরকারের সহযোগিতায় ‘রেইন ফর লাইফ’ নামে তিন বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে ব্র্যাক জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচি। উপকূলের মানুষ, বিশেষ করে নারী নেতৃত্বকে এই প্রকল্পের কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।

সম্প্রতি ঢাকার ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত কর্মশালায় ‘রেইন ফর লাইফ’ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক যাত্রা ঘোষণা করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আশাশুনি, মোংলা ও পাথরঘাটা উপজেলায় ৯০ হাজারেরও বেশি মানুষ মানুষ উপকৃত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিকস মোলার বলেন, রেইন ফর লাইফ’ প্রকল্পটি সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রকৃতিনির্ভর সামগ্রিক পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। এটি কেবল মানুষের জন্যই নয়, ফসল, গবাদিপশু এবং সামগ্রিক পরিবেশের জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে কাজ করবে। এই উদ্যোগটি বাংলাদেশের জলবায়ু নেতৃত্বের প্রতি ডেনমার্কের আস্থা ও অংশীদারত্বের প্রতীক।

কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় প্রয়োজন সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি। আমাদের সমাধানগুলো হতে হবে ব্যয় সাশ্রয়ী, টেকসই, স্থানীয় জনগোষ্ঠী পরিচালিত এবং বাস্তবসম্মত। ‘রেইন ফর লাইফ’ প্রকল্পটি নিরাপদ পানি এবং খাদ্য নিরাপত্তা - এই দুটি বিষয়কে একসঙ্গে মোকাবিলা করছে, কারণ জলবায়ু সংকটের প্রেক্ষাপটে এই দুইয়ের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে।  

কর্মশালায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বার্ক) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. নাজমুন নাহার করিম।

‘রেইন ফর লাইফ’ প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন ব্র্যাকের জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির পরিচালক ড. মো. লিয়াকত আলী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির প্রধান আবু সাদাত মনিরুজ্জামান খান। কর্মশালায় নীতিনির্ধারক, উন্নয়ন সহযোগী, বাস্তবায়নকারী সংস্থা এবং উপকূলীয় এলাকার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

পরিকল্পনা বিভাগের সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন বলেন, সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও অন্যান্য অংশীদারদের মধ্যে সমন্বয়ের বিষয়টি শুধু আনুষ্ঠানিক সম্পর্কের মধ্যে আবদ্ধ না রেখে একে কার্যকর করে তুলতে হবে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা একটি মৌলিক অধিকার। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে এই অধিকার থেকে বঞ্চিত।  

তিনি ব্র্যাক এবং এর মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের ‘চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করতে এবং ভবিষ্যতের ক্ষয়ক্ষতি রোধে সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অংশীদারত্ব অপরিহার্য।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. নাজমুন নাহার করিম বলেন, এই প্রকল্পে ক্লাইমেট অ্যাকশন গ্রুপ, অ্যাডাপটেশন ক্লিনিকসহ সকল ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রাখা হয়েছে।

২০২২ থেকে ২০২৪ সালে এই প্রকল্পের প্রথম ধাপে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার মাধ্যমে ৭২ হাজারেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ পানীয় জলের আওতায় আনা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি বাড়তে থাকায় দীর্ঘমেয়াদি পানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে পানিসম্পদ, কৃষি ও প্রকৃতিভিত্তিক পদ্ধতির সমন্বয়ে একটি সমন্বিত সমাধানের প্রয়োজন, যা ‘রেইন ফর লাইফ’ প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে।  

২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এই প্রকল্পে পরিবার ও কমিউনিটি পর্যায়ে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ, জলাশয়ের পানি পরিশোধন এবং জলবায়ু সহনশীল কৃষিকে উৎসাহিত করতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রকল্পের আওতায় কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্র্যাকের ‘অ্যাডাপটেশন ক্লিনিক’ মডেলের মাধ্যমে বিশেষ করে নারীদের নেতৃত্বে প্রান্তিক কৃষকদের জলবায়ু সহনশীল প্রযুক্তি ও পরামর্শ দেওয়া হবে এবং তাদের জন্য অর্থায়নের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।  


এমইউএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।