ঢাকা, রবিবার, ২৬ আশ্বিন ১৪৩২, ১২ অক্টোবর ২০২৫, ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৭

বইমেলা

শিশু কর্নারে গুগলের কেরামতি!

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:৩৩, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৭
শিশু কর্নারে গুগলের কেরামতি! অমর একুশে গ্রন্থমেলা/ছবি: জিএম মুজিবুর

গ্রন্থমেলা থেকে: কিশোর ভুবন প্রকাশনীতে বিক্রি হচ্ছে শিশুতোষ বই সিনডারেলা। ঝকঝকে বইটিতে রয়েছে ডিজনি ল্যান্ডের শিশুদের প্রিয় চরিত্র সিনডারেলার ছবি। বিদেশি এই গল্পের বইটির মূল্য একশত টাকা মাত্রা। বইটিতে ঝকঝকে যে ছবিগুলো এসেছে, সেগুলো গুগল থেকে ডাউনলোড করা। নেই লেখক বা শিল্পীর কোনো পারিশ্রমিক।

অন্যদিকে সপ্তডিঙ্গা প্রকাশনী থেকে রফিক আহম্মেদের ‘পাখির আশা পাখির বাসা’ ছড়ার বইটির মূল্য একশত টাকার বেশি। কারণ হিসেবে প্রকাশক নজরুল ইসলাম বলেন, এখানে চিত্রশিল্পীদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয়েছে।

এর পেছনে পরিশ্রম রয়েছে লেখক থেকে শুরু করে প্রকাশক এবং বাইন্ডারের।

বইমেলায় শিশু কর্নারে স্টল রয়েছে প্রায় অর্ধশত তবে এখানকার প্রকাশনীগুলোতে শিশুদের নতুন বইয়ের সংখ্যা হাতেগোণা।

শিশু প্রকাশ, ওয়ার্ল্ড অব চিলড্রেন বুক, লাবনী, মেলা প্রকাশনী, গোল্ডেন বুকস কর্নার, ডাক প্রকাশনী, কিশোরভুবন, প্রিয় প্রকাশ, ডাক প্রকাশনী, ঘাস ফড়িংসহ বেশ কিছু স্টলে শিশুদের নতুন কোএনা বই পাওয়া যায়নি।

ঠাকুরমার ঝুলি, আলিফ লায়লা, বিভিন্ন ছবি এবং চিত্রের বই, বিদেশি কার্টুনের বই, অক্ষর জ্ঞানের বই বিক্রি হচ্ছে এসব স্টলে। এসব বইয়ের দামও বেশ কম।

শব্দশিল্প প্রকাশনীতে নতুন বই রয়েছে ৮টি, পঙ্খিরাজে রয়েছে ৩টি, ঘাষফড়িংয়ে ৩টি নতুন বই রয়েছে।

প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশীয় শিল্পীদের অর্থ দিয়ে বই প্রকাশ করতে হয় এবং পরিশ্রমের বিষয় থাকে বলে পাইরেট বইয়ে ঝুঁকে অসাধু প্রকাশকরা। যার প্রভাব পড়ে শিশু পাঠক এবং লেখকদের ওপরও।

নজরুল ইসলাম বলেন, মেলায় পাইরেট বই নিয়ন্ত্রণ করতে বাংলা একাডেমির টাস্কফোর্সটি যদি সঠিকভাবে কাজ করতো, অন্তত সপ্তাহে একদিন নজরদারি করতো, তাহলে যারা দেশি বই ছাপায় তাদের জন্যে ভালো হতো। কারণ, পাঠকরা সস্তায় পায় বলে বিদেশি বইয়ের দিকে ঝুঁকে।

তবে শিশু সাহিত্যের প্রকাশ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে লেখক সংখ্যা কমে যাওয়াকে উল্লেখ করেছেন কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, শিশুদের জন্যে লেখার মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। শিশু সাহিত্যের জন্যে যে ধরনের শব্দ বা বাক্য ব্যবহার করতে হয়, যে পরিমাণ নিষ্ঠা থাকতে হয়, তার অভাব রয়েছে। যেটা আমরা দেখেছিলাম রোকনুজ্জামান দাদা ভাইয়ের সৃষ্টিতে।

তিনি বলেন, প্রযুক্তির সঙ্গে শিশুদের চাহিদাও ভিন্নতা পাচ্ছে। বিচিত্র ছবির দরকার হচ্ছে। ছবি ও কথার মিশ্রণে নতুন বই আনতে হচ্ছে প্রকাশকদের। আমাদের প্রান্তিক অঞ্চল থেকেও লেখকদের উঠিয়ে আনতে হবে। এখন যেটুকু হচ্ছে মন্দ নয়।

ইংরেজি সাহিত্যের এই অধ্যাপক বলেন, এখন শিশুদের বই পড়ার সময় নাই। এতো পরীক্ষার চাপে শিশুরা বই পড়তে পারছে না। স্কুল, কোচিং, হোমওয়ার্ক করেই সময় যায়।

পাইরেট বইয়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান শায়খ বলেন, বাংলা একাডেমিকে এই বিষয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। শিশু কর্নারে শিশু সাহিত্যের প্রকাশনা হয়েছে খুব কম। বেশিরভাগই বিদেশি বই নেট থেকে নামিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৭
এমএন/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।