ঢাকা: বাংলাদেশের গণমাধ্যমে বড় এক রূপান্তর ঘটে গেছে গত তিন দশকে। ছাপা পত্রিকার সঙ্গে বিকাশ ঘটেছে টেলিভিশন ও অনলাইন গণমাধ্যমের।
সেই চাহিদা পূরণেই মূলত করপোরেট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ‘করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি’র (করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা) জায়গা থেকে গণমাধ্যমে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। এতে গণমাধ্যমের জৌলুশ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে তথ্যের উন্মুক্ত ও অবাধ প্রচার।
এই জৌলুশ ম্লান হওয়ার উপক্রম হয়েছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের ‘এক উদ্যোক্তা, এক গণমাধ্যম’ সুপারিশে। কমিশনের এই পর্যবেক্ষণ বা সুপারিশের সঙ্গে বাস্তবতার মিল খুঁজে পাচ্ছেন না গণমাধ্যমসংশ্লিষ্টরা। সাংবাদিক নেতাদের কেউ কেউ এই সুপারিশে ‘উদ্দেশ্য’ দেখছেন।
সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশমালায় গণমাধ্যমের মালিকানা সম্পর্কে বলেছে, ‘একক মালিকানায় একই ভাষায় একাধিক দৈনিক পত্রিকা বা একাধিক টেলিভিশন চ্যানেল প্রতিযোগিতার পরিবেশ নষ্ট করে। সেই সঙ্গে গণমাধ্যমের যে প্রভাবক ক্ষমতা, তা নিজ স্বার্থে কেন্দ্রীভূত করে। সে কারণে এ ব্যবস্থার অবসান হওয়া দরকার। ’
‘বিদ্যমান এ ব্যবস্থার দ্রুততম সমাধান করতে হবে। একই সাবান একাধিক মোড়কে বাজারজাত করা যেমন বাজারের প্রতিযোগিতাকে নষ্ট করে, একই মালিকানায় একই ভাষায় একাধিক দৈনিক পত্রিকাও গণমাধ্যমের প্রতিযোগিতাকে নষ্ট করে এবং পাঠক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। টেলিভিশনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এক উদ্যোক্তার একটি গণমাধ্যম (ওয়ান হাউস, ওয়ান মিডিয়া) নীতি কার্যকর করাই গণমাধ্যমে কেন্দ্রীকরণ প্রতিরোধের সেরা উপায়। ’
কমিশনের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘যেসব কোম্পানি/গোষ্ঠী/প্রতিষ্ঠান/ব্যক্তি/পরিবার একইসঙ্গে টেলিভিশন ও পত্রিকার মালিক, তারা যেকোনো একটি গণমাধ্যম রেখে অন্যগুলোর মালিকানা বিক্রির মাধ্যমে হস্তান্তর করে দিতে পারে। অথবা দুটি মিডিয়ার (টেলিভিশন ও পত্রিকাকে) সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীকে একত্রিত করে আরও শক্তিশালী ও বড় আকারের একটি মিডিয়া (টেলিভিশন অথবা দৈনিক পত্রিকা) পরিচালনা করতে পারে। ’
কমিশনের এই পর্যবেক্ষণ বা সুপারিশের সঙ্গে বাস্তবতার মিল খুঁজে পাচ্ছেন না গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টরা। তাদের যুক্তি, একই গ্রুপ একাধিক গণমাধ্যম পরিচালনা করলেও সেখানে সম্পাদকীয় নীতি একই থাকে না। কারণ, বিভিন্ন গণমাধ্যম একই সাংবাদিকদের মাধ্যমে পরিচালিত হয় না। তাই একই সাবান একাধিক মোড়কে বাজারজাতের সঙ্গে গণমাধ্যমের বিষয়টি মেলানো খুবই সরলীকরণ ও আবেগনির্ভর হয়ে গেছে।
গণমাধ্যমের প্রতিযোগিতার যে বিষয়ের কথা বলা হয়েছে, সেটিরও সঠিকতা পাওয়া যায়নি। বাস্তবতা হলো, একই গ্রুপের একাধিক গণমাধ্যমেও নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকে। পাঠক শুধু মালিকানার বিচারে সংবাদপত্র কেনেন না, বরং কনটেন্টের বিচারও করে থাকে। এ কারণে একই গ্রুপের একাধিক সংবাদপত্রের সার্কুলেশনেও অনেক ক্ষেত্রে আকাশ-পাতাল পার্থক্য দেখা যায়। কেননা, একজন সম্পাদক তার সংবাদপত্র উপস্থাপন করেন। এখানে মালিকের ভূমিকা অতি গৌণ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালিকানা হস্তান্তরের বিষয়ে যে সুপারিশ করা হয়েছে, তাতে একেবারেই বাস্তবতা নেই। কারণ, বিগত দুই দশকে সংবাদপত্রের মালিকানা হস্তান্তরের ইতিহাস খুব সুখকর নয়। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, শুধু পেশাদার সাংবাদিকেরা করপোরেট গ্রুপের সহায়তা ছাড়া গণমাধ্যম টিকিয়ে রাখতে পারেননি।
যেসব গণমাধ্যমের মালিকানা হস্তান্তর হয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানে গণমাধ্যমকর্মীরা গণছাঁটাইয়ের শিকার হয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে পরিচালন ব্যয় মেটাতে না পেরে অনেক উদ্যোক্তা নিজ থেকেও তাদের মিডিয়ার কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। বরং করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো রুগ্ন শিল্পের মতো হলেও গণমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
কমিশনের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘তথ্যের সঙ্গে মানুষের বিশ্বাস বা আস্থার বিষয়টি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা জনগণের আমানতের সঙ্গে তুলনীয়। অথচ ব্যাংকের আমানতকে জনগণের আমানত বিবেচনায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তি বাধ্যতামূলক করা হলেও আমাদের দেশে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তেমনটি করা হয়নি। ’
‘ব্যাংকিং খাতে কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি বা একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালক পারিবারিকভাবে ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করতে পারে না এবং কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে একই সময়ে পরিবারের তিনজনের বেশি পরিচালক থাকতে পারেন না। কিন্তু গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তাই পরিবর্তন প্রয়োজন। ’
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘কমিশন প্রথম পর্যায়ে মাঝারি ও বড় গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোকে সর্বসাধারণের জন্য শেয়ার ছাড়া ও স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া সমীচীন মনে করছে। উদ্যোক্তা পরিচালক ও ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি বা একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শেয়ার ধারণের সীমা ২৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত করা ও প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মধ্যে শেয়ারবণ্টন বাধ্যতামূলক করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে। ’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিডিয়াকে একই কাতারে এনে কমিশন এই খাতে বাস্তবতা বিবর্জিত নীতির আলোকে সুপারিশ করেছে। ব্যাংকগুলো আমানত সংগ্রহ করে এবং ঋণ বা বিনিয়োগ করে। এটি সম্পূর্ণ আর্থিক বিষয়।
অথচ গণমাধ্যমে সরাসরি অর্থ বিনিয়োগ করা হলেও এর ফিডব্যাক অনেক ক্ষেত্রেই কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে আসে না। করপোরেট বিজ্ঞাপনের বাজারে গণমাধ্যমকে অনেক লড়াই করতে হয়। যেখানে স্যোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো পর্যন্ত এখন বিজ্ঞাপনের বাজার দখল করে নিচ্ছে।
তাছাড়া সরকারি বিজ্ঞাপনের বিল পেতে গণমাধ্যমগুলোকে গলদঘর্ম হতে হয়। নিউজপ্রিন্ট আমদানি, প্রেসের ব্যয়, স্যাটেলাইট বিল, কর্মীদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য পরিচালন ব্যয়ের জন্য গণমাধ্যমকে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়। সেখানে এরকম অলাভজনক সেবামূলক প্রতিষ্ঠানকে শেয়ারবাজারে আনার বিষয়ে বাস্তবভিত্তিক কোনো গবেষণা কমিশন করেছে কি না, তা আলোচনার দাবি রাখে।
গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, কমিশন অনেক ক্ষেত্রেই গণমাধ্যমের প্রকৃত সংকট বের করতে পারেনি। তাই প্রকৃত সংস্কারের জন্য যেসব বিষয় আলোচনায় আনা প্রয়োজন, অনেক ক্ষেত্রে তা আসেনি। গত দেড় দশকে কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা থাকায় গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরা হয়েছিল। এ কারণে অনেক ক্ষেত্রেই গণমাধ্যম তার কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।
গণমাধ্যমের মালিকপক্ষের দাবি, কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা না রাখার পেছনে তাদের দায় নেই। বরং পুরোটা সময়ে গণমাধ্যমকে বিশেষ এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল। কোনো গণমাধ্যম ক্ষমতাসীনদের স্বার্থের বাইরে গেলেই সেটি বন্ধ করে দেওয়া হতো, নয়তো নানাভাবে চাপে রাখা হতো।
বন্ধের তালিকায় ছিল চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি ও দৈনিক আমার দেশের মতো গণমাধ্যম। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ কতগুলো নিপীড়নমূলক আইনের খড়্গ গণমাধ্যমের ওপর ছিল। এ কারণে অনেক ক্ষেত্রেই শুধু মালিক নয়, গণমাধ্যমের সঙ্গে সম্পৃক্ত পেশাদার কর্মীরাও সেলফ সেন্সরশিপ আরোপ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
কতগুলো বিষয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে এমনভাবে জড়িত যেন— একটি আরেকটির সঙ্গে হাত ধরাধরি করে চলে। যেমন- বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও কার্যকর সুশীল সমাজ— এসব বিষয় কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থায় চলতে পারে না। ওয়ান-ইলেভেন থেকে শুরু করে বিগত প্রায় আড়াই দশকে বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে সেই চাপ মোকাবিলা করতে হয়েছে। এখানে যে শুধু গণমাধ্যমকে ‘তোষামোদ’ করতে হয়েছে তা নয়, বরং গণমাধ্যমকর্মী ও মালিকদের নানাভাবে চাপে রাখা হয়েছে।
একুশে টেলিভিশনের মালিক আব্দুস সালাম, এনটিভির মালিক আলহাজ্ব মোসাদ্দেক আলী, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও যায় যায় দিন সম্পাদক শফিক রেহমানের মতো ব্যক্তিদের কারাবরণ করতে হয়েছে।
দিগন্ত টেলিভিশনের মালিককে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। দৈনিক সংগ্রামের অফিস ভাঙচুর ও সম্পাদককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা বলতে গিয়ে সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ ও রুহুল আমিন গাজীর মতো মানুষকে দীর্ঘদিন কারাবরণ করতে হয়েছে।
সাংবাদিক শহিদুল আলম, রোজিনা ইসলাম, শামসুজ্জামান, শফিকুল ইসলাম কাজলসহ মাঠপর্যায়ের বহু গণমাধ্যমকর্মীকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনসহ নিপীড়নমূলক নানা আইনে কারাবরণ করতে হয়েছে। এমনকি একাধিক সাংবাদিক গুমের শিকারও হয়েছেন।
এমন বাস্তবতার মধ্যদিয়ে গণমাধ্যমকে দীর্ঘ দুই দশক পার করতে হয়েছে। এই কঠিন পরিস্থিতিতেও ‘করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি’ হিসেবে বড় বড় গ্রুপ বা প্রতিষ্ঠান গণমাধ্যম ধরে রাখতে পেরেছে। অনেক বড় প্রতিষ্ঠানকে বিপুল আর্থিক লোকসানও গুনতে হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কঠিন সময়ে যেসব করপোরেট গ্রুপ গণমাধ্যমের ম্রিয়মান অস্তিত্বকে অন্তত টিকিয়ে রেখেছিল, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ সেগুলোর বিরুদ্ধে কার্যত খড়্গহস্ত হওয়ার চেষ্টা করেছে। কমিশনের ‘ওয়ান হাউস, ওয়ান মিডিয়া’ নীতি সেটিরই প্রমাণ দেয়।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন এই প্রস্তাবের সঙ্গে একমত নই। একজন উদ্যোক্তার একাধিক সংবাদমাধ্যম থাকতেই পারে। তিনি গণমাধ্যমের নীতিমালা মানছেন কি না, সেটা দেখতে হবে। আমরা মনে করি এ ধরনের প্রস্তাবনা বাস্তবভিত্তিক নয়। তাই এমন কোনো প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন সম্মতি দেবে না।
বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, গণমাধ্যম কমিশনের কিছু কিছু প্রস্তাব ভালো। তবে নতুনত্ব কিছু নেই। একেবারেই গতানুগতিক। কিছু সিদ্ধান্ত দেখে মনে হচ্ছে, কোনো মিডিয়া হাউস থেকে প্রভাবিত হয়ে কিছু সুপারিশ এসেছে। কমিশন বাস্তবতা বিবর্জিত অনেক সুপারিশ করেছে। যেমন বিসিএস ক্যাডারের মতো বেতন নির্ধারণ! এটা সব হাউজের পক্ষে কি সম্ভব?
তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। টিসিবির ট্রাকের পেছনে মানুষের লাইন দেখলে সেটি সহজে অনুমান করা যায়। বিনিয়োগ করতে আসছে না কেউ। প্রতিনিয়ত শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। লাখ লাখ শ্রমিক চাকরি হারিয়ে বেকার। সংবাদমাধ্যমেগুলোতে চলছে অস্থিরতা। অধিকাংশ গণমাধ্যম নিয়মিত বেতন দিতে পারছে না। সরকার গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপনের টাকা পরিশোধ করতে পারছে না। এই অবস্থায় যখন কমিশন বিসিএস ক্যাডারের মতো সাংবাদিকদের বেতন নির্ধারণ করতে চায়, তখন তো অধিকাংশ মিডিয়া মারা পড়বে।
তিনি আরও বলেন, আরেকটি বিষয় আমাকে বিস্মিত করেছে। কোন হাউস কয়টি পত্রিকা বা টেলিভিশন চালু করতে পারবে, সেটিও তারা ঠিক করে দিয়েছে। একটি মিডিয়া হাউস তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হাউসকে কব্জা করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে এ ক্যাম্পেইন (প্রচারণা) চালিয়ে আসছে। এ ধরনের নিয়ন্ত্রণের কোনো বৈধ যুক্তি আছে কি? যার বৈধ টাকা আছে সে কেন একাধিক মিডিয়া করতে পারবে না। আপনাকে দেখতে হবে এসব মিডিয়া নীতিমালা লঙ্ঘন করছে কি না।
এই সাংবাদিক নেতা বলেন, দুনিয়াজুড়ে অনেক মিডিয়া গ্রুপ রয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা গ্রুপের অনেক পত্রিকা রয়েছে। ভারত সরকার কি এ বিষয়ে কোনো নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে? গণমাধ্যম কমিশন যে ‘ওয়ান হাউস, ওয়ান মিডিয়া’ প্রস্তাব করেছে, এটি উদ্দেশ্যমূলক নয়, তা বলি কী করে? এরইমধ্যে পত্রিকায় খবর বের হয়েছে, এই কমিশনের সুপারিশমালায় একটি বড় বিজনেস হাউসের প্রচ্ছন্ন প্রভাব রয়েছে। আমারও মনে হচ্ছে তেমনটি ঘটেছে।
মিডিয়া মুঘল রুপার্ট মারডকের নাম হয়তো অনেকেরই জানা। তার প্রতিষ্ঠান নিউজ করপোরেশন। তিনি বিশ্বজুড়ে শত শত স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বহুমুখী প্রকাশনা ও সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানের মালিক। একই প্রতিষ্ঠানের অধীনে যুক্তরাজ্যে রয়েছে দ্য সান ও দ্য টাইমস; অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ, হেরাল্ড সান ও দ্য অস্ট্রেলিয়ান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও নিউইয়র্ক পোস্ট।
এ ছাড়া তিনি টেলিভিশন চ্যানেল স্কাই নিউজ অস্ট্রেলিয়া এবং ফক্স নিউজ (ফক্স করপোরেশনের মাধ্যমে), টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরিস ফক্স এবং নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ডের (বর্তমানে বিলুপ্ত) মালিকও ছিলেন।
লিবার্টি মিডিয়ার চেয়ারম্যান জন কার্ল মেলোন। তিনি ‘কেবল কাউবয়’ নামেও পরিচিত। তিনি বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ধরনের মিডিয়া, টেলিযোগাযোগ এবং বিনোদন প্রতিষ্ঠানের মালিক।
১৯৯২ সালে তিনি ‘ফাইভ হানড্রেড চ্যানেল ইউনিভার্স’ ধারণাটি ব্যবহার করেন ভবিষ্যতের মিডিয়ার পরিবেশ-পরিস্থিতি বোঝানোর জন্য, যেখানে বিপুলসংখ্যক টিভি চ্যানেলের প্রয়োজনীয়তার দিকে তিনি ইঙ্গিত করেন। তার ডিসকভারি কমিউনিকেশনস, যা এখন ডিসকভারি ইনকরপোরেটেড, এই এক প্রতিষ্ঠানের অধীনে রয়েছে ডিসকভারি চ্যানেল, টিএলসি (দ্য লার্নিং চ্যানেল), অ্যানিমেল প্ল্যানেট ইত্যাদি। শুধু রুপার্ট মারডক বা জন কার্ল মেলোন নন, এ রকম এক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অধীনে অনেক মিডিয়া থাকা প্রতিষ্ঠানের তালিকা বেশ দীর্ঘ।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০২৫
কেআই/আরএইচ