একটি পরিচ্ছন্ন, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন গণতন্ত্রের প্রথম শর্ত। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে সবার অংশগ্রহণে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করেনি।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণাকে বিএনপি স্বাগত জানিয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। বিএনপির সমমনা দলগুলো রোডম্যাপকে সমর্থন ও ইতিবাচক বলে অভিহিত করেছে। তবে নির্বাচন বানচাল করতে একটি পক্ষ মাঠে নেমেছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত কদিনে একাধিকবার বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। পতিত স্বৈরাচার ও তাদের দোসররা যে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এ দেশে হতে দিতে চায় না, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনবিরোধী, দেশবিরোধী অনেক ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত জালই তারা বিস্তার করবে। এ ব্যাপারে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে সদা সতর্ক থাকতে হবে। দেশের স্বার্থের প্রশ্নে, অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রশ্নে তাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার মতপার্থক্য পতিত স্বৈরাচারকে উৎসাহিত করছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। এ মুহূর্তে যখন রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনমুখী হওয়া অত্যাবশ্যক। সে ক্ষেত্রে কিছু দলের নির্বাচন বিমুখতা দুর্ভাগ্যজনক। নির্বাচনের পরিবেশ নেই, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই, এমন নেতিবাচক কথাও বলা হচ্ছে। নির্বাচনি পরিবেশ ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব একা সরকারের নয় রাজনৈতিক দলসহ নির্বাচনের অন্যান্য স্টেক হোল্ডারেরও। সরকার ও স্টেক হোল্ডারদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত ও কার্যব্যবস্থাই নির্বাচনের পরিবেশ ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে পারে। সরকার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন উপলক্ষে সরকারের প্রতিজ্ঞার কথা ব্যক্ত করেছেন। বলা হয়েছে, আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের জনগণের প্রতি এটি অন্তর্র্বর্তী সরকারের একনিষ্ঠ অঙ্গীকার। বিবৃতিতে এ-ও উল্লেখ করা হয়েছে, নির্বাচন বিলম্বিত ও বানচাল করার জন্য সব ষড়যন্ত্র, বাধা অথবা প্রচেষ্টা অন্তর্র্বর্তী সরকার এবং গণতন্ত্রপ্রেমী দেশপ্রেমিক জনগণ দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করবে। জনগণের ইচ্ছা জয়ী হবে, কোনো অশুভ শক্তিকে গণতন্ত্রের পথে আমাদের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে দেওয়া হবে না।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, জনগণই বিএনপির সব রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস। জনগণের চাওয়া এবং সমর্থনের বাইরে গিয়ে বিএনপি অন্য কিছুকে সমর্থন করে না এবং করবেও না। বিএনপি সরকার গঠন করতে সক্ষম হলে কীসের ওপর ভিত্তি করে দেশ পরিচালনা করবে, তা আড়াই বছর আগেই তারেক রহমান উপস্থাপন করেছেন। বিএনপি হলো সেই রাজনৈতিক দল, যে আমাদের মিডিয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ২১ দফাকে কেন্দ্র করে বেগম খালেদা জিয়া নতুন বাংলাদেশের রূপকল্প দিয়েছিলেন। বিএনপির তরফে এর আগেই দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, জনগণ নির্বাচনের জন্য উন্মুখ। কোনো অপশক্তি ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না।
নির্বাচন প্রশ্নে সরকার ও বিএনপি এককাট্টা। অন্যান্য দলেরও উচিত, নির্বাচন নিয়ে কচলাকচলি না করে অভিন্ন অবস্থান নেওয়া। পতিত স্বৈরাচার ও ভারত যখন নির্বাচনবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তখন যে কোনো মূল্যে নির্বাচন সম্ভব করতে হবে। এ প্রতিজ্ঞায় দৃঢ় হওয়া সব রাজনৈতিক দলের একান্ত কর্তব্য। এদিকে ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র পাঁচ মাস বাকি। সেই নির্বাচনের জন্য চ্যালেঞ্জ দেশের অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। খুনখারাবি, রাহাজানি, লুটতরাজ, মব ভায়োলেন্স, দাঙ্গাহাঙ্গামা লেগেই আছে। এর ওপর শুরু হয়েছে পরিকল্পিত মব সন্ত্রাস। তাই বলছি, সরকারকে এই মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে কাজ করতে হবে। পরিশেষে বলছি, বাংলাদেশ সম্প্রীতির দেশ। এখানে যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন মত ও পথের অনুসারীরা শান্তিতে তাদের বিশ্বাস ও আদর্শের চর্চা করে এসেছে। তবে দেশে বর্তমানে এমন অনেক ঘটনা ঘটছে, যা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র বলেই মনে হচ্ছে। এ ব্যাপারে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য